প্রতিনিধি, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের কৃষকরা তীব্র শীত আর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর থেকেইে বেশি ফলনের আশায় এখন তারা আলু ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এবং আগাম জাতের আলু জমি থেকে উত্তোলন করে বিক্রি শুরু করেছেন। কিন্তু আলুর দাম নি¤œমুখী হওয়ায় কৃষকরা হতাশায় ভুগছেন। কৃষকদের দাবি সরকার এখন থেকেই আলু সংরক্ষনের জন্য রক্ষণাবেক্ষন , দেশের বাহিরে রপ্তানি এবং হিমাগারে ভাড়া কমানোর জন্য উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
জেলা কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, জেলার ১৯টি হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ২ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আলু সংরক্ষণের জন্য রাখবেন। এবার জেলায় আলু রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ২শ হেক্টর। আগের বছর ছিল ৩৯ হাজার হেক্টর মত প্রায়। কৃষরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে এবার উন্নত জাতের- কার্ডিনাল, ডায়ামন্ড, এ্যারিস্ট্রিক, লরা, ক্যারেজ আলু এবং দেশি জাতের- বট পাকরি, তেল পাকরি, ফাটা পাকরি, পাকরি, রোমানা ও জাম আলু এবং আগাম জাতের- গ্রানোলা, মিইজিকা, ফ্রেসসহ অন্যান্য জাতের আলু চাষ করেছেন।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গেলে দেখা মিলছে এলাকার কৃষকেরা আলু জমি থেকে তুলে রাস্তার পাশে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। জমির পার্শ্বে রাস্তার ধার থেকেই পাইকাররা দর-দাম করে সেই আলু ভ্যান, ভটভটি কিংবা ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে বাজারে।
এবার আলু মৌসুমে আলুর আবাদ বেশী হয়েছে। বর্তমান সময়ে আগাম জাতের আলু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এবং কৃষকরা আলু বিক্রি শুরু করেছে। আলুর বাম্পার ফলন হলেও গত বছরের তুলনায় প্রতিমন আলু ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা কমে বিক্রি করছে কৃষকরা। গত বছর এই সময়ে বিভিন্ন জাতের আলু বিক্রি হয়েছে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকায়। এবার সেই আলু বর্তমান বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪শ ৫০ থেকে ৫শ ২০ টাকা দরে। এবং হিমাগারে গত বছর ৬০ থেকে ৬৫ কেজির আলু বস্তা প্রতি ভাড়া ছিল ৩শ ৩০ থেকে ৩শ ৫০ টাকা। এবার সেই বস্তা প্রতি ভাড়া বৃদ্ধি করেছে ৪শ টাকা।
কালাই উপজেলার ইমামপুর গ্রামের বর্গাচাষি ফজলু রহমান জানান, বর্তমানে বাজারে আলুর দাম কম হওয়ায় প্রতি বিঘায় লোকশান হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। উপজেলার মাত্রাই এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম,সাইদুর, আকরাম, মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে জানান, বর্তমানে আলুর বাজার যে অবস্তা তাতে করে পুরো দমে বিক্রি সময় আরো ধস নামার সম্ভাবনা তাই এখন থেকেই আলু সংরক্ষনের জন্য রক্ষণাবেক্ষন , দেশের বাহিরে রপ্তানি এবং হিমাগারে ভাড়া কমানোর জন্য উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।
এ ব্যাপারে আলু ব্যবসায়ীরা জানান,এখন বিভিন্ন জাতের আলু সরবরাহ বেশী হওয়ায় আমরা জয়পুরহাট ছাড়াও দেশের বিভিন্ন মোকামে এসব আলু সরবরাহ করছি। আমরা যেমন দামে কিনি তেমন দামে বিক্রি করি। এক্ষেত্রে আমরা কেজিতে ২৫ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা লাভ করি। আগে বেশী দামে কিনতাম বেশী দামে বিক্রি করতাম। এখন কম দামে কিনি কম দামে বিক্রি করি।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা বেগম জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বর্তমানে আলুর উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি হওয়ায় বাজার কিছুটা নিম্নমুখী। তবে আলুর এ দাম কিছুদিন পরে আর একটু বৃদ্ধি পাবে। জেলার বিভিন্ন হিমাগার মালিকদের সাথে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কৃষকদের স্বার্থে কথা বলা হবে।