গোল আলু দেশে একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি বহুবিধ উপায়ে খাওয়া যায়। একসময় ভাতের ওপর চাপ কমানোর জন্য বেশি করে আলু খাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। প্রচারণা চালানোও হয়েছিল, ‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান।’ এরপর আলুর চাষ বেড়েছে। অনুকূল পরিবেশ ও বাজারজাতকরণের সুবিধার জন্য কিছু জেলায় এর চাষ বেড়েছে। ‘কৃষকের গলায় আলুর ফাঁস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ডেস্ক প্রতিবেদনের তথ্য এরকম: উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয় বগুড়া ও জয়পুরহাটে। গত বছর কৃষক ভালো দাম পেলেও এবার পড়েছেন সংকটে। বাজারে আলুর দাম এতই কম যে উৎপাদন খরচও উঠছে না। অন্যদিকে হিমাগারে সংরক্ষণের সুযোগ থাকলেও হঠাৎ ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণায় সেই পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন ক্ষুব্ধ কৃষক বলেন, সিন্ডিকেট করে তাদের গলায় এই ফাঁস পরানো হচ্ছে। কারণ এখন প্রতিকেজি আলুতে তাদের লস হচ্ছে ৫ টাকার কাছাকাছি। সেখানে অতিরিক্ত মূল্যে সেই আলু হিমাগারে রাখলে তাদের সর্বনাশ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এতে এই মৌসুমে শুধু এ দুই জেলায় হিমাগার ভাড়া গুনতে হবে ৩০০ কোটি টাকার বেশি।
অন্যদিকে হিমাগার মালিকদের মজুতপ্রবণতায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে প্রতিবছর। মৌসুম শুরুর পর বাজারে আলু সাধারণত ২০ টাকা কেজির মধ্যে থাকে। এবারও কাছাকাছি পর্যায়ে। এটি আরও কমতে পারে। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আলুর উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ ও রপ্তানি ব্যবস্থাপনায় নিবিড় তদারকি ছাড়া আলুর যৌক্তিক দাম নির্ধারণ কঠিন বৈকি! দেশে প্রায় এক কোটি টনের মতো আলু উৎপাদন হয়। অথচ হিমাগারগুলোর মোট ধারণক্ষমতা ২২ লাখ টন। অর্থাৎ উৎপাদিত আলুর মাত্র এক-পঞ্চমাংশ হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আলু নষ্ট হয়। কৃষক নিজবাড়িতে সংরক্ষণ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করা গেলে আলুর নষ্ট হওয়া কমে যাবে। আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণেও ওপর জোর দিতে হবে। এতে হিমাগারের ওপর নির্ভরতা কিছুটা হলেও কমবে। সরকারি উদ্যোগে হিমাগার নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে হবে।
তা হলে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, দামও থাকবে সাধারণ মানুষের নাগালে। মজুত করে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির তৎপরতা বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। ছিন্নমূল, হতদরিদ্র প্রান্তিক মানুষ থেকে শতসহস্র কোটি টাকার মালিক, ধনকুবের সবার পাতেই আলু একপ্রকার অপরিহার্য সবজি। অনুকূল পরিবেশ ও বাজারজাতকরণের সুবিধার জন্য দেশের কয়েকটি জেলায় আলুর চাষ বেড়েছে। ওই সব জেলাগুলোর কৃষকরা যেন আলু চাষে আগ্রহ না হারান সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে। তারা কী ধরনের সমস্যা ও বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েন সেটি বিবেচনায় রেখে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আলুর যৌক্তিক দাম নির্ধারণের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্যোগ নেয়া দরকার।