আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিন

সরকার দাম নির্ধারণ করার পর দাম না কমে বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, আলুর দাম বিক্রি টাকার নিচে নামছে না। আগে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা দরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছিল। আলুর দাম নি¤œ আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু সরকার দাম নির্ধারণ করার পর দাম না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু খুচরা পর্যায়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করার পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে অভিযান পরিচলানা করেছে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিজেরাই নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করেছেন কয়েক জায়গায়। তারপরও আলুর দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। অথচ গত বছরই মজুত আলু নিয়েবিপদেছিলেন হিমাগারের মালিকরা। তখন আলু রপ্তানির বাজার খোঁজা আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। বেশি মুনাফার আশায় তারা আলু বিক্রি করেননি তখন। মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোয়ই আগের মৌসুমের ৪২ হাজার মেট্রিক টন আলু অবিক্রীত অবস্থায় পড়েছিল। ওই সময় নতুন মৌসুমের আলু বাজারে উঠতে শুরু করে। ফলে হিমাগারে রাখা আলু অনেক কম দামেও বিক্রি করা যায়নি। মুন্সীগঞ্জে অন্তত ৬৪টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারের ভেতর পাশে এখন আলুর বস্তা স্তূপ করে রাখতে হয়েছিল। সম্ভবত ওই অভিজ্ঞতায় তারা নতুন কৌশল নিয়েছেন।

আমাদের জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তদারকি জোরদার করায় বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার কৃষি অফিসের তথ্য, মৌসুমের শুরুতে জেলার ১৯টি হিমাগারে এক লাখ ৫০ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন আলু মজুত হয়েছে। হিমাগারে সংরক্ষণের সময় প্রকারভেদে আট টাকা থেকে ১২ টাকা কেজিদরে কেনা পড়েছে এসব আলু। হিমাগারের ভাড়া, বস্তার মূল্য পরিবহন খরচ মিলে এসব আলু হিমাগার থেকে বের হচ্ছে ১৬ থেকে ২১ টাকা কেজি দরে। অথচ এক মাস ধরে এই আলু পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায় এবং খুচরা বাজারে সিন্ডিকেটের থাবায় দাম বেড়ে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেয়া পাইকারি দাম ২৭ টাকা কেজিদরে বিক্রি করলেও মজুতদারদের লাভ থাকবে কেজিপ্রতি ১০১১ টাকা। খুচরা পর্যায়েও একই লাভ থাকবে। তারপরও খুশি নন মজুতদাররা। অবস্থায় তারা হিমাগার থেকে আলু বের করা বন্ধ রেখে খুচরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে।

নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তাদের কাছে আলু বিক্রি নিশ্চিতে সরকারকে বাজার পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে। ফলন চাহিদার বিষয়টি হিসাবে নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। ব্যবসায়ী হিমাগারের মালিকরা যাতে অতি মুনাফার আশায় আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি না করেন এবং বাজার অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।