শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জঃ মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা নদী ঘেঁষা হাসাইল গ্রামের কৃষি জমির পাশেই আলুর বস্তা (ছালা) শরীরের নিচে-ওপরে দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে এক শিশু।
কনকনে শীতের শীতল হাওয়া থেকে নিরাপদ রাখতে শিশু সন্তানকে জমির পাশেই এক টুকরো খালি জায়গায় ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন নারী শ্রমিক মা রহিমা বেগম।
পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে পদ্মার তীরের হাসাইল গ্রামের কৃষি জমিতে রোপন করা আলু গাছ পরির্চচার কাজ করছে নারী শ্রমিকরাও। সেই নারী শ্রমিকদের একজন রহিমা বেগম।
জমিতে পরিচর্চার কাজ করার সময় তার ছেলে শিশু সন্তান ঘুমিয়ে পড়লে তাকে এভাবেই ঘুম পাড়িয়ে রেখে জীবিকার তাগিদে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কৃষি জমিতে কথা হয় গাইবন্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের সঙ্গে। নারী শ্রমিক কাজলী দাস বলেন, পুরুষ শ্রমিকদের মতো তারা একই পরিশ্রম করছেন। কিন্তুু তাদের মজুরী ৪৫০ টাকা আর পুরুষ শ্রমিকদের মজুরী ৫৫০ টাকা। আর স্থাণীয় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। মজুরি বৈষম্যের এ তথ্য তুলে ধরে এ প্রতিবেদকের কাছে তাদের মনের কষ্টের কথা ব্যক্ত করেন কাজলী দাসসহ অপর নারী শ্রমিকরা ।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জে কৃষকের আলু গাছ পরির্চচার কাজে গাইবন্ধাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের বিস্তৃীর্ন কৃষি জমিতে কাজ করছে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের প্রায় লক্ষাধিক পুরুষ ও নারী শ্রমিক কৃষকদের গাছ পরির্চচায় এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে রোপন করা আলু উত্তোলনে নামবে কৃষককূল। বর্তমানে ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা জমিতে গজিয়ে ওঠা আলু গাছের পরির্চচায় ব্যস্ত হয়েছে ।
আর যেসব জমিতে গাছ না গজিয়ে ওঠতে ধীরগতি, সেখানে গাছ গজিয়ে ওঠতে ইঞ্জিন চালিত মেশিনে আলু জমিতে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। কোথাও আলু জমির আগাছা পরিস্কার করছে কৃষক ও শ্রমিকরা। কোথাও গজিয়ে ওঠা গাছ পোকামাকড়ের কবল থেকে রক্ষায় কীটনাশক ছিটাচ্ছে কৃষক-শ্রমিকরা। আর এই পরিচর্চার কাজ করতেই বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামে ভাড়া বাসা নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৬টি উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকাজুড়ে রোপন করা আলু জমির পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। বিভিন্ন এলাকা ঘূরে বিস্তৃীর্ণ ফসলের মাঠে এখন সবুজের সমারোহ দেখা গেছে। কৃষককূল পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের নিয়ে গজিয়ে ওঠা আলু গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
টঙ্গিবাড়ীর ধামারণ গ্রামের কৃষক সাহাবুদ্দিন হাওলাদার জানান, এবারও ৬শ’ শতাংশ জমিতে আলু রোপন করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে জেলার বিস্তীর্ন এলাকায় আলু উত্তোলন শুরু হবে। তাই গজিয়ে ওঠা গাছ দেখে আলুর ফলন ভালো হবে মনে করে আশায় বুক বেঁধেছেন।
সদর উপজেলার পূর্ব মাকহাটী গ্রামে কৃষি জমি পরির্চচায় ব্যস্ত শ্রমিক মুক্তার ও মাসুম মিয়া। তারা জানালেন, ভালো ফলনের আশায় কৃষকের আলু গাছ পরিচর্যায় জনপ্রতি ৫’শ টাকা মজুরীতে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার কাজ করেছে।
সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের ইউনিয়নের টরকী গ্রামের আলু চাষী মোঃ নূর বলেন, “এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। এখন গাছ গজিয়ে ওঠায় তা পরিচর্যা করতে নারী শ্রমিকরা তার জমিতে কাজ করছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু আবাদের মৌসুম এলেই রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকরা আলু রোপন কাজে যুক্ত হতে প্রতিদিন সকালে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জড়ো হচ্ছেন.।কৃষকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর তারা আলু রোপনে জমিতে কাজ শুরু করে দিচ্ছেন।
রংপুর থেকে আগত শ্রমিক আব্বাস মিয়া জানান, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী আবার কোথাও দিনব্যাপী মজুরী নিয়ে তারা কৃষকের জমির আলু গাছ পরিচর্যা করছেন। শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরী পাওয়ায় তারাও খুশীতে কনকনে শীতের মধ্যে আগাছা পরিস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, “এ মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন।
তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়। জেলায় ৭৮ হাজার কৃষক পরিবারের ৪ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত।