আসাদ রাসেল, রাজশাহী: রাজশাহীর চাষিরা হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না। বিভিন্ন হিমাগার কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে আলু নেবে না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। চাষিরা জমি থেকে আলু ওঠানোর পর পড়েছেন বিপাকে। ফলে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। আর এ আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন একটি সিন্ডিকেট বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের কৃষক মজের আলী বলেন, চলতি মৌসুমে ২৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। লাভের স্বপ্ন নিয়ে অনেক খরচা করেছি। তবে কীটনাশক, সার, শ্রমিকের মজুরিসহ আরও অনেক ঝামেলা পেরিয়ে মাঠের আলু ওঠানো শুরু করেছেন তিনি। অন্যবারের চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে, হিমাগারে জায়গা সংকটের কারণে রাখতে পারছেন না। তাই প্রতিবস্তা ৭৮০ টাকা দরে বিক্রি করে দিয়েছেন।
মজের আলী আরও জানান, প্রতি বস্তা আলু ৮৫ কেজি হিসেবে বস্তা করা হয়েছে। বিঘাতে খরচ হয়েছিলো ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা। মাঠেই আলু প্রতি বস্তা ৭৮০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। এতে প্রতি বিঘায় ৩১ হাজার টাকা পাচ্ছেন তিনি। এতে কোনোভাবে আসলটা উঠে এসেছে তার।
এটা শুধু মজের আলীর সমস্যা নয়। এমন সমস্যায় রাজশাহী জেলার কৃষকরা পড়েছেন। জেলার তানোর, বাগমারা, পবা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, চারঘাটসহ অন্য উপজেলাগুলোর একই অবস্থা। হিমাগারে জায়গা সংকুলানের অজুহাতে কৃষকরা মাঠেই কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে ভালো দামের আশায় ১০ থেকে ১২ দিন ধরে আলু বস্তাভর্তি করে মাঠে ও রাস্তার পাশে রেখে অপেক্ষা করছেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেলায় আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে মাঠে চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চাষ বেশি হওয়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি বস্তা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রাজশাহী জেলায় সরকারি-বেসরকারি ২৭টি হিমাগার আছে। হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা যাবে প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ বস্তা। বাকি তিন ভাগের দুই ভাগ আলু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন চাষিরা।
কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর উৎপাদন বেশি। আলু সংরক্ষণে সমস্যায় পড়েছেন তারা। অনেকেই বিক্রিও করে দিচ্ছেন। মাঠেই বিক্রি করে দেওয়ার কারণে ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আলু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা এ ধরনের অবস্থার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে।
আলুচাষি অনেক কৃষক জানান, একটু উৎপাদন বেশি হলেই নানা ঝামেলা পোহাতে হয় চাষিদের। আবার প্রতিটি হিমাগার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই আলুচাষ করে থাকেন। প্রথম দিকে চাষিদের কিছু আলু হিমাগারে নেওয়ার পর বন্ধ করে দেন। তাদের আলুতে হিমাগার ভর্তি না হলে আবারও তারা আলু নিয়ে থাকেন। আবার অনেক বড় চাষি হিমাগার থেকে ঋণ নিয়ে আলুচাষ করে থাকেন। তাদের আলু না নিলে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না চাষিরা। আরও হিমাগার প্রয়োজন বলে কৃষকরা জানান।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক হিমাগার ব্যবস্থাপক বলেন, আলু নিচ্ছি না এমন অভিযোগ সঠিক নয়। আবার হিমাগার থেকে ঋণ নেওয়া চাষিদের আলু যদি হিমাগারে না রাখতে পারেন তবে তারা ঋণ পরিশোধ করবেন কী করে? তাই সবাইকে ম্যানেজ করেই আমাদের চলতে হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, এবার অনুকূল আবহাওয়া এবং আলু ক্ষেতে অন্যান্য বছরের ন্যায় মড়ক না থাকায় ব্যাপক উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে, রাজশাহী অঞ্চলে আরও বেশি হিমাগার থাকলে চাষিদের সমস্যা কম হতো বলে তিনি মনে করেন।