আয়ের ওপর দৃষ্টিপাত

মিজানুর রহমান শেলী: হিসাবরক্ষণের নানা রকম কৌশল ও পদ্ধতি রয়েছে একাডেমি ও ব্যবহারিক পরিসরে। এগুলোয় বিভিন্ন পার্থক্য দেখা যায়। আকার, কার্যকারিতা, বয়স, সরলতার মাত্রা ইত্যাদির ভিত্তিতে এগুলো ভিন্ন মাত্রার। একইভাবে আমাদের এবারের আবিষ্কৃত এই হিসাবরক্ষণ পদ্ধতিটি অনেক বেশি ছোট আকৃতির। তাছাড়া খুব বেশি সাধারণীকরণও করা হয়েছে এখানে। কিন্তু এর কার্যকারিতা কিন্তু ছোট কিংবা অতি আনাড়ি নয়। আর তাই এ পদ্ধতিটি আপনাদের ব্যবহার করার জন্য বলা চলে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর আরও কারণ রয়েছে: ইন্স্যুরেন্স খাতে বার্কশায়ারে সম্পদের রয়েছে একটি জোটবদ্ধতা বা সমন্বিত মাত্রা। এটা আবার একটি প্রতিনিধিত্বশীল সমন্বয় সৃষ্টি করতেও প্রস্তুত থাকে। কোম্পানির এই প্রতিনিধিত্বশীয়ল সমন্বয়ের যাবতীয় সম্পদের মালিকানা রয়েছে ২০ শতাংশের কম। তাই এটাকে তৃতীয় শ্রেণিকরণের আওতায় ফেলা হয়ে থাকে।
এসব কোম্পানির বেশিরভাগই তুলনামূলকভাবে খুব সামান্য মানের বা ছোট সমানুপাতে ডেভিডেন্ডের মোট আয় পরিশোধ করে থাকে। এর অর্থ দাঁড়ায় তারা যা আয় করে তার খুবই সামান্য অংশের খোঁজ আমরা রাখতে সমর্থ হই। তাদের চলতি আয়ের সার্বিক তথ্য আদতে আমরা রাখি না। কেননা তা তাদের প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় না। কৌশলগত কারণেই তারা এর বাইরে থেকে যায়। ফলে আমাদের নিজস্ব চলতি পরিচালনা আয়ের খাতায় তাদের আয়ের হিসাবের সামান্য অংশই উপস্থাপিত হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আমাদের রিপোর্টেড অপারেটিং আয় বলতে ডিভিডেন্ড থেকে আহরিত আয়ের অঙ্কই প্রকাশ পায় তখন ব্যাপারটি ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়। আসলে তখন আমরা আমাদের আর্থিক কল্যাণের উপস্থাপনায় কেবল তাদের আয়ের পরিসরকেই দেখতে পায়। কিন্তু তাদের ডিভিডেন্ড এখানে কোনোভাবেই প্রকাশ পায় না।
বিভিন্ন কোম্পানির এই তৃতীয় প্রকরণের মধ্যে রয়েছে আমাদের হোল্ডিংস। তবে আমাদের হোল্ডিংস খুব নাটকীয়ভাবেই বেড়ে চলেছে এই সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। তবে এই উন্নয়নের ধারা তখন স্থায়িত্ব পেয়েছে যখন আমাদের বিমা ব্যবসায় একটি ধারাবাহিক উন্নয়ন সংগঠন করা সম্ভব হয়েছে। হ্যাঁ ইতোমধ্যে আমাদের এই বিমা ব্যবসা সমৃদ্ধি লাভ করেছে। একই সঙ্গে সিকিউরিটি মার্কেটের কথাও এখানে উল্লেখ করতে চায়। সিকিউরিটি মার্কেটে কমন স্টক বিষয়ক যাবতীয় পরিসরে বেশ আকর্ষণীয় প্রস্তাবনা এসেছে এই সাম্প্রতিক সময় ধরে। এই সার্বিক বিষয়গুলোকে কিন্তু কোনোভাবেই কাকতালীয় বলা যায় না। তবে পরিপ্রেক্ষিতগত সুবিধার কারণে যে আমাদের হোল্ডিংসের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে, সেটা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। কিন্তু এর ফল কী দাঁড়াল? দেখা গেল, হোল্ডিংসের এই বিশাল পরিসরের উন্নয়ন, এর সঙ্গে রয়েছে আয়ের প্রবৃদ্ধি, এই উভয়টিই বিভিন্ন কোম্পানির আংশিক মালিকানায় চরিতার্থ হয়েছে। আর সার্বিকভাবে তার একটি অপ্রচলিত ফল বেরিয়ে এসেছে। এটাকে অবার অনেকে অস্বাভাবিকতাও বলতে পারেন। ওইসব কোম্পানি যা অর্জন করেছে তা থেকে আমাদের আয়ের অংশটি কিন্তু তারা তাদের ডিভিডেন্ড থেকে পরিশোধ করেননি। যাহোক এই আয় বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সার্বিক রিপোর্টেড বার্ষিক পরিচালনা আয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। ওদিকে দেখা যায়, প্রথাগত যে সেকেলে হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি একটি সমতল দশায় উপরিতলে পৌঁছতে আমাদের আয়ের অর্ধেকেরও কম পরিমাণের ‘আইচবার্গ’ আমাদের সামনে তুলে রাখে। এই করপোরেট দুনিয়ায় এমন ফল খুবই বিরল। আর আমাদের ক্ষেত্রে এটা কতবার ঘটেছে, সেই হিসাব যদি কেউ জানতে চান তবে এর সহজ উত্তর হলো বারবারই ঘটছে।
আয়ের বাস্তবতাকে যদি আমরা নিজেরাই বিশ্লেষণ করে থাকি, তবে যে ফল পায় তা কিছুটা হলেও সাধারণভাবে গৃহীত হিসাবরক্ষণ নীতিমালার সঙ্গে ভিন্নতা প্রদর্শন করে থাকে। বিশেষ করে এই পার্থক্যটি আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখন, যখন কি না এসব নীতিমালা উচ্চ ও অনিশ্চিত মুদ্রাস্ফীতি হারের পরিবেশে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা অবশ্যই ঘটে থাকে। কিন্তু এ কথাটি আমি না বলে পারছি না যে, একটি হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করা খুবই সহজ কাজ কিন্তু একটি নতুন কোনো উন্নত উপায়ে একটি হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করাটি সহজ কাজ নয়। এই কাজটি আর যাই হোক সমালোচনার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে থাকে।
আবার দেখা যায় যে, প্রজšে§র পর প্রজš§ একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে। এই ধারাবাহিক ব্যবহারের মধ্যে অনেক ধরনের সংকট সৃষ্টি হয় বা চোখে পড়ে। আবার কখনও দেখা যায় একটি ধারাবাহিক অভ্যাস গড়ে ওঠে। অন্যদিকে ব্যবসার পরিবেশ ও প্রতিযোগিতা এক স্থানে স্থির থাকে না, তখনই বিপত্তি বেধে যায়। আর এই সংকটটিকে বলা হয় স্মৃতিমূলক সংকট। আমরা কিছু ব্যবসার ১০০ শতাংশ মালিকানা লাভ করেছিলাম। এসব ব্যবসার রিপোর্টেড আয় ১০০ সেন্টের কাছে ছিল না ডলারের হিসাবে। এখন অবধি আমরা এ মন্তব্যটি করেই চলেছি। হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে যদি আমরা বিবেচনা করে থাকি, তবে বলতে হয়, আমরা সামগ্রিকভাবে এই নড়বড়ে অবস্থাটিকে ইতোমধ্যে এই নতুন পদ্ধতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি। হ্যাঁ এই নিয়ন্ত্রণ কিন্তু প্রায়োগিক নয়। এটা এখন অবধি তত্ত্বীয় স্তরেই রয়ে গেছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের সব আয়কে নতুন করে বিনিয়োগ না করছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সমগ্র সম্পদের সার্বিক মূল্যমানের ওপর একটি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। বলা চলে আমাদের সম্পদের মূল্যমান দিন দিন কমেই যাচ্ছে।
কিন্তু এই বিনিয়োগেই কী যায় আসে। আমরা এখন অবধি কোনো সম্ভাবনাই দেখি না, আমাদের এই আয়কে বিনিয়োগ করলে আশানুরূপ লাভের ফসল আমরা ঘরে তুলতে পারব বাজারে আমাদের মূলধনের ভিত্তিতে। আবার আমরা বিভিন্ন ব্যবসার ছোট ছোট অংশেরও মালিকানা লাভ করেছি। এর সঙ্গে রয়েছে কিছু অনন্য সাধারণ পুনঃবিনিয়োগী সম্ভাবনা। আবার এর অর্জিত আয়ের রয়েছে একটি আর্থিক মূল্য কাঠামো, যা ডলারের ভিত্তিতে আমাদের ১০০ সেন্টকেও অতিক্রম করে যাবে।
এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের অর্জিত আয় আমাদের কত ভাগ মালিকানা রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে না। দেখা যায়, অনেক সময় আমরা ১০০ ভাগ কিংবা ৫০, ২০ বা এক শতাংশ মালিকানা লাভ করে থাকি। কিন্তু তাতে কোনো যায় আসে না। বরং এই অর্জিত আয়ের মূল্য নির্ভর করে বা নির্ধারিত হয়, যা তারা বিনিয়োগ করে তার ব্যবহারের ওপর এবং এই ব্যবহার থেকে যে আয় আসে তাকে আবার নতুন করে ব্যবহার করলে যা উৎপাদিত হয় তার ওপর।
এই দর্শন রচনাবলি সম্পাদনা করেছেন লরেন্স এ. কানিংহ্যাম।
অনুবাদক: গবেষক, শেয়ার বিজ।