মিজানুর রহমান শেলী: আবার এ কথাটি সত্য যে, কে এই ব্যবহার যোগ্যতা নির্ধারণ করছে সে বিষয়ে তদন্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। যে কেউই এই কাজ করে দেখাতে পারেন। আমরা নিজেরা করতে পারি। আবার আমরা ভাড়া করে আনিনি বরং যারা আমাদের নিজস্ব ম্যানেজার তারাও এটা নির্ধারণ করতে পারেন। এখানে কাজকে গণনা করা হয়, কিন্তু কে কাজ করছেন তা ধর্তব্যের বিষয় নয়। এমনকি আমাদের সামগ্রিক নিজস্ব রিপোর্টেড পরিচালনা আয় থেকে আমরা যা আয় করে থাকি, তা এই মূল্যমানকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারে না। হোক তা এই অন্তর্ভুক্তিমূলক অথবা না।
বস্তুত যদি একটি গাছ একটি বনের মধ্যে বেড়ে ওঠে, আর আমরা তার আংশিক মালিকানা লাভ করি কিন্তু গাছটির প্রবৃদ্ধি কতখানি তার হিসাব আমাদের আর্থিক স্টেটমেন্টে যদি উপস্থাপনও না করি, তবুও আমরা ওই গাছের ওই অংশের মালিকানাস্বত্ব টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হবো।
একটি কথা খুব সতর্কতার সঙ্গে আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই, আমরা কোনো ধরাবাধা গতানুগতিক ব্যবসায় নীতিতে চলতে পছন্দ করি না। সৃজনশীলতা আমাদের কাছে মোক্ষ। কিন্তু যে কোনো বিনিয়োগেই আয় করার বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে আমরা যখন কোনো কোম্পানিতে ১০ শতাংশ মালিকানা লাভ করি, তখন সেই কোম্পানি থেকেও নিশ্চয় যে কোনো ধরনের লাভের চিন্তা রাখব। কিন্তু এই সামান্য বিনিয়োগে আমরা আসলে কোনো ধরনের লাভের দিকে বেশি মনোযোগ দেব সেটাই এখানে দেখার বিষয়। সাধারণত এখানে আর্থিক লাভবান হওয়ার চেয়ে ম্যানেজারিয়াল অভিজ্ঞতা অর্জন করাটাই সবচেয়ে বড় কথা। তাই আমরা এসব ক্ষেত্রে আমাদের প্রকল্পগুলোর সম্ভাবনার আকাক্সক্ষা রাখি। আমরা আদতে কোনো ভাড়াটে কর্মী দিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি না। তাই এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সেই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় কাজ করার চেষ্টা করি। তাতে করে আমাদের অভিজ্ঞতা ও সুনাম দুটোই বাড়তে থাকে। আর কিছু না কিছু লাভের ফসল তো অবশ্যই ঘরে ওঠে।
তবে অবশ্যই আমরা ছোট ব্যবসা বলে অবজ্ঞা করি না। ব্যবসার পরিসর ছোট বলে এড়িয়ে চলা কিংবা ব্যবসায় শেয়ার সেখান থেকে গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তা আমরা কখনোই মাথায় আনি না। তবে পরিস্থিতি একেবারেই সে রকম নয়। এসব ব্যবসায় ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপারও বটে। আমরা যা আয় করি তাকে পুনরাই ব্যবহারের একটি কৌশল আছে আর এই কৌশলটিকে আমরা প্রায়ই গ্রহণ করে থাকি পুরোপুরি উদ্যোমের সঙ্গে। সাধারণত যেখানে আমাদের বিনিয়োগী স্বার্থ থাকে, সেখানে কোম্পানি যদি এমন কোনো কৌশল ব্যবহার করে থাকে তবে সেখানেই আমাদের বেশি আগ্রহ দেখা যায়। মনে রাখা উচিত এই বিনিয়োগী স্বার্থই হলো, তাদের নিজ নিজ শেয়ারের পুনরায় বিক্রয়। এর কার্যকরণ তাহলে কী? উত্তর বা কার্যকারণটা খুব সাধারণ। যদি কোনো ভালো ব্যবসা বাজারে বিক্রি হতে থাকে তার ইনট্রিনসিক ভ্যালু থেকে অনেক নিম্ন দরে, যা মূলধনের ব্যবহারে অনেক বেশি লাভের সম্ভাব্য প্রকাশ করে থাকে এবং নিশ্চয়তার ব্যাপারে আদতে তেমন কোনো সন্দেহ থাকে না। তাহলে নিশ্চয় তখন দরকষাকষির সব মালিকের বিভিন্ন স্বার্থ সেখানে বরং বহুগুণে বেড়ে যায়।
করপোরেট অধিগ্রহণ কার্যক্রমের প্রতিযোগী চরিত্রের একটি ভালো গুণ হলো, এখানে পেমেন্টের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। তবে যতটা দাম তার চেয়ে দাম পরিশোধের ধারাবাহিকতা এখানে অনেক বেশি ভালো হয়ে থাকে। আর এই ঘটনাটি ঘটে থাকে তখন, যখন একটি কোম্পানি অন্য কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা স্বত্বের পুরোটাই কিনে নেয়। কিন্তু সিকিউরিট মার্কেটের নিলামের ধরন এরকম নয়। সেখানে দেখা যায়, খুব ভালোভাবে পরিচালিত কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নিজেদের শেয়ারের প্রায় অর্ধেকাশং পুনরায় কিনে নেওয়ার সুযোগ তারা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এখানে তারা ৫০ শতাংশের নিচে কোনো দরে কিনতে বাধ্য হন। তাতে করে দেখা যায়, তাদের একই আয়ের সক্ষমতা সম্পন্ন কোনো কোনো ব্যবসায় অধিগ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আর এটা সম্পন্ন হয় অন্যান্য এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে।
‘আয়’ এই শব্দটির একটি নির্ভুল অঙ্কটা থাকে। আর যখন কোনো আয়ের অঙ্কের সঙ্গে একটি অযোগ্য তদন্ত সনদ জুড়ে দেওয়া হয়, তখন একজন সাদাসিধা পাঠক চিন্তা করতে পারেন যে, এটা কোনো সনদযুক্ত নিশ্চয়তার সঙ্গে তুলনা করা চলে এই জন্য যে, এখানে ডজন ডজন দশমিকের হিসাব দেখানো হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা অন্য রকমের। দেখা যায়, আয়ের পরিসর যতটা মন্দা ততটাই নিচু হয়ে যায়, যখন কোনো হাতুড়ে ডাক্তারকে একটি কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ে বসিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে আর বলা হয় যে, আপনিই এই কোম্পানির যাবতীয় রিপোর্টিংয়ের কাজটিও করবেন। পরিশেষে সত্যটা সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতবদল হয়ে যায়। অন্তত এই কথা বলা যায়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকান তাদের ভাগ্য গড়ে তুলেছেন তাদের হিসাবরক্ষণের মরীচিকা নগদীকরণের মাধ্যমে।
এই হিসাবরক্ষণ নিয়ে অনেক হাস্যকর ব্যবসা রয়েছে। এর সংখ্যা নিতান্ত হাতেগোনা কিছু নয়। রসপণ্ডিতদের ছলনায় এ বিষয়টিকে বিবেচনা করতে গেলে বেন গ্রাহামের স্যাটায়ার পড়তে হবে। তিনি এটা ১৯৩৬ সালে লিখেছিলেন। সে সময়ে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের আর্থিক স্টেটমেন্ট প্রকাশ হয়েছিল। সেসব স্টেটমেন্টকে অনেকেই প্রশংসা করেছিল। সনদ পেয়েছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তারা। এই দেখে বেন গ্রাহাম শুরু করেছিলেন সমালোচনা। এই সমালোচনা কিন্তু চাপা স্বরে ছিল না। বরং লোকসমক্ষেই তা হতো। রসালো আলাপ আর বাক্য রচনার ভেতর দিয়েই তা তখন হতো; যা হোক আজকের দুনিয়ায় আমি সেই একই চিত্র দেখতে পাচ্ছি। তাই ১৯৩৬ সালে বেন গ্রাহামের লেখা সেই রস মন্তব্য আজও প্রাসঙ্গিক। এটা পরিতাপের বিষয় নিশ্চয়। সেই স্যাটায়ারে তদন্তকারীদের নাম বড় বড় করে লেখা হতো। পরিষ্কারভাবে বলতে হয়, বিনিয়োগকারীরা অবশ্যই তাদের পাহারা নিশ্চিত করে চলে। আর শুরুতেই তারা একটি পাকাপোক্ত হিসাবরক্ষণ কৌশল গ্রহণ করে থাকে। অবশ্যই এ কাজটি তারা শেষে করে না। শুরুতেই করে। তারা চায় তাদের সত্যিকার আয়ের নির্ভুল হিসাব তাদের হাতে থাকুক। তাহলেই কেবল নিজেদের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তারা অর্জন করতে সমর্থ হবেন। বার্কশায়ারের নিজস্ব রিপোর্টেড আর্নিংটা অনেক সময় ভুল পথে প্রদর্শিত হতে দেখা যায়। এটাকে আবার ভিন্ন কৌশলও বলা যেতে পারে। কেননা পথটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলে। বস্তুত আমাদের বিভিন্ন কোম্পানিতে একটি বিশাল সংখ্যক মানুষের বিনিয়োগ রয়েছে। অর্থাৎ আমাদের সঙ্গে রয়েছে একটি বড় সংখ্যক বিনিয়োগকারী দল। তাদের আয় ডিভিডেন্ডস থেকে অনেক দূর এগিয়ে যায়।
এই দর্শন রচনাবলি সম্পাদনা করেছেন লরেন্স এ. কানিংহ্যাম।
অনুবাদক: গবেষক, শেয়ার বিজ।