শেয়ার বিজ ডেস্ক: ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেনে যে কয়েকটি দেশ সবচেয়ে বেশি সহায়তা করছে তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। এবার সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে ইউক্রেনে আরও ৭০টি সামরিক যান পাঠাবে অস্ট্রেলিয়া। খবর: আল জাজিরা।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ গতকাল সোমবার ১১০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের (৭৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার) এ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পরিকল্পনাটি এক সপ্তাহ আগে বিবেচনাধীন ছিল। তবে রাশিয়ায় ভাড়াটে যোদ্ধাদের গ্রুপ ভাগনারের বিদ্রোহের কারণে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দিতে কিছুটা সময় নেন।
প্যাকেজের মধ্যে ২৮টি এম১১৩ সাঁজোয়া যান, ১৪টি বিশেষ অভিযানের যান, ২৮টি মাঝারি ট্রাক এবং ১৪টি ট্রেলারের পাশাপাশি ১০৫এমএম আর্টিলারি গোলাবারুদের অতিরিক্ত সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আলবেনিজ বলেন, রাশিয়ার কার্যকলাপের নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। ইউক্রেনকে বিজয় অর্জনে সহায়তা করার সংকল্পে আমরা অটল।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস সাংবাদিকদের বলেন, অস্ট্রেলিয়া যে অতিরিক্ত সহায়তা দিচ্ছে তার জন্য আমি গর্বিত। তবে তার আশঙ্কা, এটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত হবে। তাই যতদিন প্রয়োজন ইউক্রেনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
এই প্যাকেজে হকেই পেট্রোল সামরিক যান কিংবা বুশমাস্টার ইনফ্যান্ট্রি যান নেই। এ ধরনের যানবাহনের জন্য ইউক্রেনের তরফ থেকে অনুরোধ এলেও তাতে সাড়া দেয়নি অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ। তবে ইউক্রেনের আশা ছিল, দেশটির পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার বাহিনীর দখলকৃত শহরগুলো উদ্ধারে এ ধরনের সামরিক যান পাওয়া যাবে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের মুখপাত্র সেরহি চেরেভাতি বলেন, কয়েক মাস লড়াইয়ের পর মে মাসে ওয়াগনার বাহিনীর দখলে নেয়া বাখমুত শহরের কাছে সেনাবাহিনী আগের দিনের তুলনায় কমপক্ষে ৬০০ মিটার (এক হাজার ৯৭০ ফুট) অগ্রসর হয়েছে। এর জবাবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ওই এলাকায় অন্তত ১০টি হামলা হলেও তা প্রতিহত করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেন থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা আরও ১২ মাসের জন্য বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ইউক্রেনকে ৭৯০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের (৫২৯ মার্কিন ডলার) সহায়তা করেছে অস্ট্রেলিয়া। এ অর্থের বেশিরভাগ সামরিক খাতে ব্যয় করা হয়েছে।
ইউক্রেনের জন্য জাতিসংঘের গঠিত মানবিক তহবিলে অতিরিক্ত ১০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দান করেছে অস্ট্রেলিয়া। এ তহবিলের অর্থ দিয়ে যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনের নাগরিকদের সহায়তা করা হচ্ছে। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের কয়েক লাখ বেসামরিক নাগরিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। দেশের অভ্যন্তরে থাকা নাগরিকরা সংকটময় জীবনযাপন করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ইউক্রেনে সহায়তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে বলেন, একটি দেশ চাইলেই আরেকটি দেশের সীমান্ত বদলে দিতে পারে না। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম এজ নিউজপেপারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কিছু বিষয় নিয়ে তিনি চিন্তিত।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় ইউক্রেনের পুনর্গঠনবিষয়ক ‘আন্তর্জাতিক সম্মেলন ২০২৩’। এর উদ্দেশ্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি জোরদার করা। এতে ৬১ দেশের এক হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। ইউক্রেন পুনর্গঠনে তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, ৩৮টি দেশের চারশর বেশি প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনে একসঙ্গে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা করবে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র আরও ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেয়।