মো. আসাদুজ্জামান নূর: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও শক্তি খাতের কোম্পানি ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। বড় মূলধনি এ কোম্পানিটি ধারাবাহিকভাবে মুনাফায় রয়েছে। সেই অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারদের বেশ ভালো লভ্যাংশও প্রদান করে আসছে। তবে গত কয়েক বছর কমছে কোম্পানিটির মুনাফার হার। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের মুনাফার হার কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
কোম্পানিটির সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বশেষ চার বছর ধরে কোম্পানির মুনাফা হার কমছে। ২০২০-২১ হিসাববছরে এর মুনাফা হার দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশে। অথচ ২০১৯-২০ হিসাববছরেই এটি ছিল ৬০ দশমিক ২২ শতাংশ।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা হার ছিল ২০১৭-১৮ হিসাববছরে। ২০১৬-১৭ হিসাববছরে ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে মুনাফার হার বেড়ে ২০১৭-১৮-তে দাঁড়ায় ৭৪ দশমিক ৮০ শতাংশে। এরপর আর সেটি বাড়তে দেখা যায়নি। বরং ধারাবাহিকভাবে মুনাফার হার কমেছে। ২০১৮-১৯ হিসাববছরে মুনাফার হার ছিল ৬৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১৯-২০ হিসাববছরে সেটি কমে দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ২২ শতাংশ। সেখান থেকে ২০২০-২১ হিসাববছরে মুনাফার হার ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের সমন্বিত বিক্রি থেকে আয় ছিল প্রায় তিন হাজার ৫৮ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তাদের মোট মুনাফা দাঁড়ায় এক হাজার ১৮১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রশাসনিক ও পরিচালন খরচ বাদ এবং অন্যান্য আয় যোগ করে ইউনাইটেড পাওয়ারের পরিচালন মুনাফা ছিল এক হাজার ১৬৮ কোটি চার লাখ টাকা। এর সঙ্গে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া আয় মিলিয়ে কোম্পানিটির কর-পূর্ব মুনাফা দাঁড়ায় এক হাজার ১১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর থেকে আয়কর বাদ দিয়ে ইউনাইটেডের নিট মুনাফা দাঁড়ায় এক হাজার ১১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ হিসাবে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের প্রফিট মার্জিন দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের সমন্বিত বিক্রি থেকে আয় ছিল প্রায় এক হাজার ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সে অর্থবছর সব খরচ ও কর বাদ দিয়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৬০৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের প্রফিট মার্জিন দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ২২ শতাংশ।
এদিকে গত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ বেড়েছে ইউনাইটেড পাওয়ারের। ২০১৬-১৭ হিসাববছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের এক হাজার ৫০৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকার সম্পদের বিপরীতে দায়ের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ও ২০১৭-১৮ হিসাববছরে এক হাজার ৬৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকার সম্পদের বিপরীতে দায় ১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তবে ওই দুই বছর কোম্পানিটির কোনো ঋণ ছিল না। কিন্তু পরের বছর কোম্পানিটির দায় ও সম্পদ অনেক বেড়ে যায়। এ সময় কোম্পানিটি ঋণও গ্রহণ করে।
২০১৮-১৯ হিসাববছরে ইউনাইটেড পাওয়ারের চার হাজার ২০৩ কোটি ২০ লাখ টাকার সম্পদের বিপরীতে দায় এক হাজার ১৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ সালে তিন হাজার ৬০৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকার সম্পদের বিপরীতে দায় ৬২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২০-২১ হিসাববছরে ছয় হাজার ৭৬৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সম্পদের বিপরীতে ইউনাইটেড পাওয়ারের দায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন হাজার ৪৫৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে ইউনাইটেড পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মো. বদরুল এইচ খান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গত বছর কোম্পানি ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফার্নেস অয়েল ও গ্যাস পদ্ধতি সংযোজন করেছে। দুটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার। এর মধ্যে এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লিমিটেডে (ইউজেপিএল)। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানিতে এ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এজন্য দায় কিছুটা বেড়েছে ও মুনাফার হার কমেছে। কিন্তু গতবারের চেয়ে এবার ইউনাইটেডের মুনাফা বেড়েছে। বিনিয়োগের সুফল আগামীতে পাওয়া যাবে। এটি বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।’
তথ্যমতে, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার ‘এ’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন করছে। এক হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বুধবার কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ২৫৩ টাকায় হাতবদল হয়েছে। ২০২০-২১ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১৮ টাকা ৮০ পয়সা ও ২০১৯-২০ সালে ১১ টাকা ১৬ পয়সা।
প্রতি বছরই শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে আসছে ইউনাইটেড পাওয়ার। সর্বশেষ ২০২০ সালে ১৪৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে কোম্পানিটি। এর আগের ২০১৯ সালে ১৩০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস, ২০১৮ সালে ৯০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস, ২০১৭ সালে ৯০ শতাংশ নগদ ও দশ শতাংশ বোনাস এবং ২০১৬ সালে ১২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।
কোম্পানিটির সিংহভাগ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে মোট শেয়ারের ৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে ছয় দশমিক ৯৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে তিন দশমিক শূন্য এক শতাংশ।