শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছে জার্মানি। সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ করেন দেশটির ভাইস চ্যান্সেলর। এক সাক্ষাৎকারে ইউরোপকে একসঙ্গে থাকার বার্তাও দেন তিনি। খবর: আনাদোলু এজেন্সি।
ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হ্যাবেক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করার জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি ঐক্যবদ্ধ ইউরোপীয় ফ্রন্টের আহ্বানও জানান। পাবলিক ব্রডকাস্টার ডয়েচল্যান্ডফাঙ্কে সাক্ষাৎকারে হ্যাবেক বলেন, ইউরোপকে অবশ্যই একসঙ্গে থাকতে হবে। হ্যাবেক জোর দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প নিজের প্রথম মেয়াদে আলাদাভাবে দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ইউরোপীয় ঐক্যকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তিনি আবারও তার সেই প্রচেষ্টাগুলোর পুনরাবৃত্তি করবেন বলেও ইঙ্গিত দেন জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর।
এর আগে ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড দখল করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি ফিরিয়ে না নেয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করে দেয় জার্মানি। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, সীমানার অখণ্ডতার নীতি প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তা খুব ছোট বা খুব শক্তিশালী দেশ যাই হোক না কেন। জার্মানি ও ডেনমার্ক মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সদস্য। শলৎস জোর দিয়ে বলেন, ন্যাটো আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং আটলান্টিক মহাসাগর উপকূলীয় দেশগুলোর সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ট্রাম্প আবারও তার গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেন, আর্কটিক দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। এরপর তিনি বারবারই এই ধারণা উত্থাপন করে আসছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র ডেনমার্ক স্পষ্ট করে জানিয়েছে, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। আর অঞ্চলটির মালিক মূলত এর বাসিন্দারা। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন ডেনিশ টেলিভিশনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা গ্রিনল্যান্ডবাসীর এবং কেবল স্থানীয় জনগণই এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ডেনমার্কের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাও প্রয়োজন। ওদিকে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুট এগিদ ডেনমার্কের কাছ থেকে তার দেশকে স্বাধীন করার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। তবে তিনিও স্পষ্ট করে বলেন, অঞ্চলটি বিক্রির জন্য নয়। গত বুধবার তিনি কোপেনহেগেন সফর করেন।
এদিকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারো বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে কখনই বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সার্বভৌম সীমান্তে আক্রমণ করতে দেবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিন ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে বলেন, আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করবে কি না, তাহলে আমার উত্তর হবে- না। আমরা কি এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি যেখানে আবারও শক্তিশালীদের টিকে থাকার নিয়ম দেখা দিচ্ছে? তাহলে এর উত্তর হবে- হ্যাঁ।
মাত্র ৫৭ হাজার জনসংখ্যার দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডে স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। তবে এর অর্থনীতি মূলত কোপেনহেগেন থেকে আসা ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল এবং এটি এখনও ডেনমার্কের অংশ। প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল তুষারাবৃত হলেও এই দ্বীপে বিরল খনিজ পদার্থের সবচেয়ে বড় মজুদ রয়েছে, যা ব্যাটারি এবং উচ্চ-প্রযুক্তির ডিভাইস তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অব ডেনমার্ক অ্যান্ড গ্রিনল্যান্ডের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, এ অঞ্চলে রয়েছে সোনা, প্লাটিনাম, হিরা ও রুবির মতো দামি খনিজ। লিথিয়াম, টাইটেনিয়ামসহ বিরল সব ধাতুর খনিও রয়েছে। এছাড়া জ্বালানি উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়লা ও ইউরেনিয়ামের খনিও রয়েছে। বড় ধরনের তেলের খনি ও প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রও রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দ্বীপটির বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে সেখানকার ভূমি ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে। সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের অপার সম্ভাবনাও উন্মোচিত হবে। বিশ্ব ব্যাংকের ধারণা, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী এসব খনিজ সম্পদের চাহিদা পাঁচগুণ বেড়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে গ্রিনল্যান্ডকে কৌশলগতভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে রাশিয়া ও চীন।