ইএফডিতে ৬ টাকা ভ্যাট দিয়ে লাখ টাকা জিতলেন ইমাম

## ইএফডি লটারি চালুর ৬ষ্ঠতম বারে লাখ টাকা পুরস্কার বিজয়ী পাওয়া গেছে

## ইমাম উদ্দিনের দেড় লাখ টাকা পুঁজির সঙ্গে যোগ হলো পুরস্কারের লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. ইমাম উদ্দিন। মাত্র দেড় লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করছেন। ব্যবসার আয় থেকে চলে তিন সন্তান নিয়ে চলা তার সংসার। সব সময় ভাবতেন, ব্যবসার পুঁজি যদি একটু বাড়ানো যায়! তিনি ভাবতেই পারেননি, সেই শুভক্ষণ চলে আসছে। একদিন হোটেলে নাস্তা খেলেন। ইমাম উদ্দিনের হিসাবে নাস্তার বিল (ইএফডি চালান) আসে ৭৯ টাকা। কিন্তু তাকে বিল দেয়া হলো ৮৫ টাকার। জিজ্ঞেস করতেই হোটেলকর্মী জানালেন, ৭৯ টাকার বিলের সঙ্গে ভ্যাট দিতে হবে ৫ টাকা ৯৩ পয়সা। ভ্যাটের টাকা দিতেই যেন কষ্ট হলো। কিন্তু তিনি জানতেন না, এই ৫ টাকা ৯৩ পয়সা ভ্যাট দিয়ে এক লাখ টাকা পুরস্কার জিতবেন তিনি।

ওই হোটেল আরেকদিন নাস্তা করতে গিয়ে আগের ইএফডি চালান মিলিয়ে দেখে তিনি হতভম্ব! তিনি সে সৌভাগ্যবান যে কিনা জুন মাসের লাখ লাখ ভ্যাটদাতার মধ্যে লটারিতে জিতলেন এক লাখ টাকা। পুরস্কারের এই লাখ টাকা ইমাম উদ্দিনের শুধু ব্যবসার পুঁজিই বাড়াবে না, তার জীবনের গল্পই হয়ত পরিবর্তন করে দেবে। প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে (১৫ জুলাই) রাজধানীর কাকরাইলে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ)-এর সম্মেলন কক্ষে মো. ইমাম উদ্দিন এর হাতে এক লাখ টাকার পুরস্কারের চেক তুলে দেয়া হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম চেক তুলে দেন। সঙ্গে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে প্রশংসায় ভাসালেন চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. আব্দুল মান্নান শিকদার, গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের মহাপরিচালক স্থপতি মো. আনোয়ার হোসাইন, ভ্যাট দক্ষিণ কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম সোহেল রহমান, প্রমীলা সরকারসহ এনবিআর ও কমিশনারেটের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কমিশনারেটের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন ভ্যাট দক্ষিণ কমিশনার এসএম হুমায়ুন কবীর।

ভ্যাটদাতাতে উৎসাহ দিতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ইএফডিএমএস চালানের উপর লটারি ও পুরস্কার চালু করে এনবিআর। ৫ জুলাই ৬ষ্ঠবারের মতো লটারি ঘোষণা করে এনবিআর; যাতে এক লাখ টাকা পুরস্কার পেলেন মো. ইমাম উদ্দিন। এর আগে পাঁচটি লটারিতে লাখ টাকা পুরস্কারের কোন প্রার্থী এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর মিডফোর্ড এলাকার অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী মো. ইমাম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ২০ জুন চকবাজারের আমানিয়া হোটেলে নাস্তা খেয়ে ইএফডি চালানে বিল দিলাম ৮৫ টাকা। আমার হিসাবে বিল হয়েছে ৭৯ টাকা। বাড়তি ৬ টাকা কিসের জিজ্ঞেস করতেই হোটেলকর্মী জানালেন, ওই ৬ টাকা ভ্যাটের। ভ্যাট দিতে একটু কষ্টই লাগছে। তবে হোটেল থেকে বলা হয়েছে, চালানটি যত্ন করে রাখতে। মাস শেষে হয়ত লাখ টাকা পুরস্কার জিতে যেতে পারি। আমি চালানটি যত্ন করে রেখে দিলাম। আরেকদিন নাস্তা করতে গিয়ে হোটেলে টাঙ্গানো লটারির তালিকাতে আমার নাম্বার মিলিয়ে আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আমি লাখ টাকা জিতেছি।

তিনি বলেন, গত বছর মাত্র দেড় লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি। ব্যবসার আয় দিয়ে আমার তিন সন্তানের সংসার চলে। লকডাউনে দোকান বন্ধ। যাতে আমি খুবই ক্ষতিগ্রস্থ। তার উপর ভাবতাম, ব্যবসার পুঁজি যদি বাড়ানো যায়। আর ভ্যাট দিলে পুরস্কার পাওয়া যায় তা ভাবতেই পারিনি। পুরস্কারের এই টাকা দিয়ে আমার পুঁজি বাড়বে। এখন থেকে আমি যত কেনাকাটা করবো, তাতে ইএফডি চালান সংগ্রহ করবো। তিনি সকলকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইএফডি চালান চেয়ে নেয়ার অনুরোধ জানান।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইএফডি লটারির বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘লটারিতে পুরস্কার জিতেছেন কিনা তা এনবিআর ওয়েবসাইটে গিয়ে ইএফডিএমএস নাম্বার দিয়ে সহজেই যাচাই করে নিতে পারবেন। লটারিতে বিজয়ীদের নাম্বার প্রতিটি হোটেল-রেস্তোঁরায় টাঙ্গানোর ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়ায় ভ্যাট দক্ষিণ কমিশনারেটের প্রশংসা করেন চেয়ারম্যান। ৬ষ্ঠ মাসে গিয়ে প্রথমবার আমার লটারিতে লাখ টাকা পুরস্কার বিজয়ী পেলাম, এতে আনন্দ লাগছে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ যাতে সহজেই ভ্যাট দিতে পারেন সেজন্য আমার ইএফডিএমএস সিস্টেমের মাধ্যমে ভ্যাট নেওয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যেই আমরা নন এসি হোটেল-রেস্তোঁরায় সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে ৫ শতাংশ এবং এসি হোটেল-রেস্তোঁরায় ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করেছি।’

পুরস্কার বিজয়ী ইমাম উদ্দিনের ভ্যাট সচেতনতার প্রশংসা করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইমাম উদ্দিন কোন সাধারণ মানুষ না। তার ভেতরে এক ধরনের অসাধারণত্ব কাজ করেন। তিনি একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি মাত্র দেড় লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করেন। এখানের আয় দিয়ে সন্তান নিয়ে তার সংসার চালান। কি প্রচণ্ড পরিশ্রম তাকে করতে হয়। পুরস্কারের এই এক লাখ টাকা তার পুঁজির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবসার পুঁজি কিছুটা হলেও বাড়াবে। ইমাম উদ্দিন যে লাখ টাকা পুরস্কার পাওয়াতে যত আনন্দ পেয়েছি, কোন বড় লোক এই পুরস্কার পেলে হয়ত এই আনন্দ পেতাম না। ইমাম উদ্দিনসহ সকল ক্রেতাকে ইএফডিতে কেনাকাটা ও পুরস্কার পেতে বেশি বেশি ইএফডিএমএস চালান সংগ্রহে রাখার অনুরোধ জানান তিনি।’

###