বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ

ইজারাগ্রহীতার ভাড়া ও বোর্ডিং চার্জে ৫৮ কোটি টাকা অনিয়ম

হামিদুর রহমান: নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩৩ জন ইজারা গ্রহীতার কাছে আদায়যোগ্য ভাড়া ও ইজারার মূল্য বাবদ প্রায় ২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে অবতরণ ও বোর্ডিং ব্রিজ চার্জ আদায় না করায় ৩২ কোটি ৩১ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অর্থাৎ ইজারা গ্রহীতার ভাড়া ও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বোর্ডিং ব্রিজ চার্জ বাবদ প্রায় ৫৮ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব-সম্পর্কিত কার্যক্রমের ওপর কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে এসব অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি এয়ারলাইন্সের কাছে অনাদায়ী অবতরণ ও বোর্ডিং ব্রিজ চার্জের পরিমাণ ২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি এয়ারলাইন্সের কাছে অনাদায়ী অবতরণ ও বোর্ডিং ব্রিজ চার্জের প্রায় ৭ কোটি টাকা, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি এয়ারলাইন্সের কাছে অনাদায়ী অবতরণ ও বোর্ডিং ব্রিজ চার্জের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং কক্সবাজার বিমানবন্ধরে তিনটি এয়ারলাইন্সের কাছে অনাদায়ী অবতরণ চার্জের পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকাসহ মোট প্রায় ৩২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে ফি, চার্জ, রয়্যালটি, প্রিমিয়াম ও ভাড়া আরোপ এবং আদায় করতে পারবে। কিন্তু এই আদেশ থাকা সত্ত্বেও আদেশ অনুসরণ না করে কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে যথাসময়ে এসব অর্থ আদায়ে ভূমিকা না রাখাই রাষ্ট্রের প্রায় ৩২ কোটি ৩১ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন ইজারা গ্রহীতার কাছে হতে ভাড়া ও ইজারা মূল্য আদায় না করায় আর্থিক ক্ষতি পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, হযরত শাহজাজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা কার্যালয়ের সাতজন ইজারা গ্রহীতার কাছে আদায়যোগ্য ভাড়া ও ইজারা মূল্য প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা অনাদায়ী রয়েছে। এছাড়া হযরত শাহজাজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষ তিনটি ইজারাকারী প্রতিষ্ঠান- এরো টেকনোলজি, স্কাই ক্যাপিটাল এয়ার এবং সিকদার মেডিকেলের সঙ্গে হ্যাঙ্গারের জায়গা ভাড়া ও ইজারার জন্য প্রায় ৯৪ লাখ টাকা চুক্তি সম্পাদন করে। চুক্তিনামা ভঙ্গ করে তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে রাষ্ট্রের পাওনা প্রায় ৬৫ লাখ টাকা অনাদায়ী রয়েছে।
অপরদিকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট কার্যালয়ে ২৩ জন ইজারা গ্রহীতার কাছে ভাড়া ও ইজারা বাবদ পাওনা প্রায় ২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা অনাদায়ী রয়েছে।

উল্লেখ্য, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কর্তৃপক্ষের কোনো পাওনা অর্থ অনাদায়ী থাকলে তা সরকারি দাবি হিসেবে পাবলিক ডিমান্ড রিকোভারি অ্যাক্ট ১৯১৩ এর বিধান মতে আদায়যোগ্য হবে। জেনারেল ফিন্যান্সয়াল রুলস-০৮ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক জারিকৃত সার্বিক কিংবা বিশেষ নির্দেশনাবলি সাপেক্ষে সরকারের পাওনা সঠিকভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে নির্ধারণ, সংগ্রহ এবং ব্যাংকে জমা প্রদান করতে হবে। অধিকতর ফিন্যান্সিয়াল রুলস-৩০ মোতাবেক পর্যাপ্ত কারণ ব্যতীত সরকারের কোনো পাওনা বকেয়া রাখা যাবে না। খাত সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কতিপয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ করে রাষ্ট্রের অর্থ লোপাট করেছে। ওই সময়ে যারা দায়িত্বে ছিল তাদের বিষয়ে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।

সিভিল অ্যাভিয়েশন তথ্যমতে, আর্থিক অনিয়মের (এসএফআই) বিষয় উল্লেখপূর্বক ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠান প্রধান বরাবর এআইআর জারি করা হয় এবং একই সঙ্গে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অবহিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাগিদপত্র দেয়া হয়। জবাব না পাওয়ায় একই বছরের ২১ মার্চ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বরাবর আধা সরকারি পত্র দেয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল অ্যাভিয়েশন) এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বকেয়া অর্থ আদায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়গুলো সুরাহা করা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে আমরা দ্রুতই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’