Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 11:57 pm

ইজিসিবির হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভ্যাট পরিশোধে ‘অনীহা’

রহমত রহমান: নারায়ণগঞ্জের নিউ হরিপুর পাওয়ার প্লান্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের (ইজিসিবি) একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। জাইকার অর্থায়নে স্থাপিত প্রকল্পটির ঠিকাদারি বিলের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য। ২০১৭ সালে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হলে ভ্যাট পরিশোধে গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। এনবিআর কর্মকর্তারা বারংবার ধরনা দিলেও ভ্যাট পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের অর্থছাড়ে দেরি হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আসছেন ইজিসিবি কর্মকর্তারা।
তবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ইজিসিবি কর্মকর্তারা ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করলেও ইচ্ছা করেই ভ্যাট পরিশোধ করেননি। এমনকি এ প্রকল্পের শুরু থেকেই তারা অসহযোগিতা করে আসছেন। অপরদিকে, ইজিসিবির হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের বিরুদ্ধে সময়মতো ভ্যাট পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে এরই মধ্যে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট সরকারি মালিকানাধীন ইজিসিবি’র একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি পরিচালিত। এ প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারের বিলের ওপর সরকার ভ্যাট পেয়ে আসছে। এছাড়া ইজিসিবি’র অপর একটি প্রকল্প নিউ হরিপুর পাওয়ার প্লান্ট ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট। এ প্রকল্পের বিলের ওপরও সরকার ভ্যাট পেয়ে থাকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ প্রকল্পে জাপানের ‘মিৎসুবিশি হিটাচি পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড (এমএইচপিএস)’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্প থেকে ভ্যাটসহ ঠিকাদারের বিলের অর্থছাড় হয়। কাজ শেষে অর্থছাড় হলে ২০১৭ সালে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ভ্যাটের ৯ কোটি সাত লাখ ৮১ হাজার ২৪৩ টাকা ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, বকেয়া ভ্যাট পরিশোধে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পূর্ব)-এর বন্দর বিভাগ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষে অর্থাৎ জুন মাসের মধ্যে ভ্যাট পরিশোধের জন্য একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়। জুনের মধ্যে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। কিন্তু অর্থছাড় হয়নি এমন অজুহাতে তারা ভ্যাট পরিশোধ করেননি। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড় হয়। ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হলেও ইচ্ছা করেই কর্মকর্তারা ভ্যাট পরিশোধ করেননি।
সূত্র জানায়, ভ্যাট কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গত ২ জুলাই হিসাব সহকারী মো. আবদুল হাকিম ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ৯ কোটি সাত লাখ ৮১ হাজার ২৪৩ টাকার ভ্যাট ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। চালানে উল্লেখ করা হয় এলটিএসএ (লং টার্ম সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট) সার্ভিসেসের বিপরীতে এমএইচপিএস জাপানকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পরিশোধিত বিলের বকেয়া ভ্যাট। নিয়ম অনুযায়ী, ঠিকাদারি বিলের ওপর উৎসে ভ্যাট কর্তনের ১৫ দিনের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এছাড়া চালানের মূল কপি ভ্যাট অফিসে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা চালানের কপি এখনও জমা দেননি। ভ্যাট জমা দেওয়া হলেও কর্তন করা ভ্যাট সময়মতো জমা না দেওয়ায় ভ্যাট বিভাগ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে সহসাই কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হবে বলে ভ্যাট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে উৎসে ভ্যাট কর্তন ও জমা দেয় কি না, তা খতিয়ে দেখতে প্রতিষ্ঠানের ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন (সিএ রিপোর্ট) চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। চিঠির জবাব ও চালানের কপি চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, জবাব দিতে বাধ্য নন এবং ভবিষ্যতে আর ভ্যাট দেওয়া হবে না। এছাড়া বন্দর বিভাগ থেকে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিশোধিত বিল এবং বিলের বিপরীতে আদায় করা ভ্যাটের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো জবাব দেয়নি।
সূত্র আরও জানায়, হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের বিরুদ্ধে এর আগেও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদারি বিলের ওপর ভ্যাট কর্তন করে সময়মতো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে না দেওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের ১৩ মার্চ চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ লাখ ৬২ হাজার ১৩৭ টাকার ভ্যাট, সুদ ১২ লাখ ৩২ হাজার ৭২ টাকাসহ মোট ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ২০৯ টাকা পরিশোধ করেনি। ফাঁকি প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। ফাঁকি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট ও অর্থদন্ড পরিশোধ করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করেন ইজিসিবির ব্যবস্থাপক মো. আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, এ ধরনের কিছুই হয়নি। কোন সালের ঠিকাদারি বিল, তাও আমার জানা নেই। আমার কাছে হেডঅফিস থেকে কাগজ রাখতে বলে, রাখি। তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী অরুণ কুমার সাহার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে প্রকৌশলী অরুণ কুমার সাহাকে ফোন করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান তার পিএ।
এ বিষয়ে ভ্যাট (পূর্ব)-এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. জাকির হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, উৎসে ভ্যাট কর্তন করার পর তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়া গুরুতর অপরাধ। আমরা প্রতিষ্ঠানটিকে সুযোগ দেওয়ার পরও তারা এর অপব্যবহার করেছে।