শেয়ার বিজ ডেস্ক: জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করার যে চেষ্টা হয়েছিল, তেমন কাজ এ দেশে আর কেউ ‘করতে পারবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেছেন, অনেক ‘ঝড়ঝাপ্টা’ পেরিয়ে বাংলাদেশ যেখানে পৌঁছেছে, সেই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় পৌনে ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার দিনটি স্মরণ করে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। শুধু আমাদের দেশের ভেতরে না, বাইরেও, সব কিছু মিলিয়ে অনেক ঝড়ঝাপ্টা পার হয়েই আজকে এ জায়গায় আমরা আসতে পেরেছি। এটাই সব থেকে বড় কথা।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশের যে উল্টোযাত্রা শুরু হয়েছিল, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিহাস একেবারেই মুছে ফেলা হয়েছিল, পুরো পরিবর্তন। এখন একটা আত্মবিশ্বাস এসে গেছে যে বাংলাদেশের ইতিহাস আর কেউ কোনোদিন বিকৃত করতে পারবে না। আর মুছতে পারবে না।’
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের যেদিন হত্যা করা হয়, সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা।
বিদেশে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। তার আগে ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়া দিল্লি থেকে দেশে ফিরলে প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সেদিন তেজগাঁও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাখো জনতা তাকে স্বাগত জানায়।
সেদিনের কথা স্মরণ করে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দলীয় নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী, যিনি গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাই হোক, এইটুকু বলতে পারি যে আল্লাহ সব সময় সহযোগিতা করেন এবং আল্লাহ কিছু কাজ দেন মানুষকে। সেই কাজটা যতক্ষণ শেষ না হয়, ততক্ষণ কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেন।’
জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে সরকারে এসেছিল, তারা দেশে ফেরার পথে পদে পদে বাধার সৃষ্টি করেছিল বলেও মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশ, স্বাধীন থাকবে এবং আমার বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। অনেক ঝড়ঝাপ্টা, বাধা অতিক্রম করেই আমাকে আসতে হয়েছিল। কারণ অনেক বাধা ছিল।’
দেশে ফেরার সেই সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনি এবং যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা ক্ষমতায়, খুনিদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে, তারা ক্ষমতায়। ওই অবস্থায় কিন্তু আমি চলে এসেছিলাম।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ‘ব্যর্থ হতে পারে না’মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাকে সফল করতেই হবে’ এমন প্রতিজ্ঞা ছিল বলেই সে সময় তারা দেশে ফিরেছিলেন।
সেই দিনটির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসেছি তো ঝড় মাথায় নিয়েই। সেদিন ৬০ মাইল বেগে ঝড় হচ্ছিল। তখন আমি ট্রাকে। আর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়।’
জনগণের সেই ভালোবাসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জনগণের শক্তিটা হচ্ছে সব থেকে বড় শক্তি। কারণ আমি যখন বাবা, মা, ভাই, বোন সব হারিয়ে এই দেশে এসেছি, গ্রামেগঞ্জে যেখানেই গেছি, সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষ, তাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, অনেক স্নেহ, দোয়া। আমার মনে হয় ওই শক্তিটাই সব থেকে বড় শক্তি ছিল।’