ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরু করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক

শেখ আবু তালেব: আর্থিক খাতে পেপারলেস ও তথ্যপ্রযুক্তিগত মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া শুরু করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জোরালোভাবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে ও পরিচালন ব্যয় কম হওয়ায় বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও কার্যক্রম বাড়িয়ে চলছে। এ সেবা দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলো প্রতি বছর দুইশ থেকে তিনশ কোটি টাকা আয় করছে। কিন্তু এখনও ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরু করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংক। এজন্য দক্ষ জনবলের সংকটকেই দায়ী করছে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে সূত্রে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অনলাইন ব্যাংকিংয়ের অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। এর উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংকের মোট তিন হাজার ৭২১টি শাখা রয়েছে। এসব শাখায় সিবিএসের (কোর ব্যাংকিং সলিউশন) আওতায় শতভাগ অনলাইন সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
গ্রাহকদের অনলাইন সুবিধা প্রদানে বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনলাইন সেবা একটি ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। দক্ষ জনবলের অভাব ও শাখার সংখ্যা বেশি হওয়ায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দ্রুত অনলাইন প্রযুক্তি গ্রহণে সক্ষম হচ্ছে না। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের শাখা শহরকেন্দ্রিক হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শাখা পল্লি এলাকায় বেশি। গ্রামে শাখা হওয়ায় গ্রাহকের পাশাপাশি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও তুলনামূলকভাবে কম প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে প্রথম শতভাগ অনলাইন হয় রূপালী ব্যাংকের। ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরু করার বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘চলতি বছর থেকেই আমরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের বোর্ডের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য আমরা টেবিলওয়ার্কও ইতোমধ্যেই শেষ করেছি। প্রথমে পাইলটভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করে এরপর পুরোদমে এ ব্যাংকিংয়ে যাব। আমরা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের পদক্ষেপ হিসেবে আমরা ইতোমধ্যেই শিয়োর ক্যাশের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং শুরু করেছি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মূলত প্রাথমিক বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় ও গুরুত্ব না দেওয়ায় সরকারি ব্যাংকগুলো ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে না। দেশের ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৪০টিতেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে। দিন দিন অনলাইনে লেনদেনে ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয় হচ্ছে। ইতোমধ্যে এর গ্রাহকসংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধাজনক হওয়ায় দেশীয় গ্রাহকের চেয়ে বিদেশিরাই আগ্রহ দেখাচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু হওয়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৯৬ শতাংশ অনলাইন সেবা দিচ্ছে। গত নভেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোতে ১৫ হাজার ৩৩৮টি লেনদেন হয়েছে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এতে ২৯ কোটি ২০ লাখ টাকার ওপর লেনদেন হয়েছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরটিজিএসের মাধ্যমে। নিরাপত্তাবোধ থেকেই এখনও ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরু করেনি। ব্যাংকটিতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরুর বিষয়ে একটি উদ্যোগ নেওয়া হলেও আইটি খাতে দক্ষ জনবলের ঘাটতি থাকায় প্রস্তাবনাটি হিমঘরে চলে গেছে।
এ বিষয়ে ব্যাংকটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সেবা দেওয়ার আগে নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভাবা হচ্ছে। বর্তমান জনবলকে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরু করতে আরও সময় লাগবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পেমেন্ট ব্যবস্থা নিয়ে একটি সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যাংকিং জনপ্রিয় হচ্ছে। একসময় ইন্টারনেট ব্যাংকিংই ব্যাংক খাতের ভবিষ্যৎ হবে। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতেও তার ছোঁয়া লাগবে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
জানা গেছে, ইন্টারনেট ব্যাংকিং শুরু করতে পারলে ব্যাংকগুলোর মোবাইল ব্যাংকিং করা সহজ হবে। অনেক ব্যাংক ইতোমধ্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং জনপ্রিয় করতে মোবাইল অ্যাপসও তৈরি করেছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে সহজেই হিসাব খোলা, পরিবর্তন বা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ, মোবাইল টপআপ, এটিএম ও শাখার লোকেশন, মিনি ও বিস্তারিত স্টেটমেন্ট, লেনদেনের সার্বিক বিবরণী, ঋণসংক্রান্ত তথ্য, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, ব্যালান্স, বকেয়া দেনার হিসাব ও পরিশোধ সীমা প্রভৃতি তথ্য জানতে পারেন কোনো গ্রাহক।