সাংবাদিকদের ইসি আলমগীর

ইভিএমে রি-রাইট এডিটের সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) চিপ এমনভাবে তৈরি যে এটা ওয়ানটাইম ইউজেবল (একবার ব্যবহারযোগ্য)। এখানে রি-রাইট করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া প্রোগ্রামিং পরিবর্তন করারও কোনো সুযোগ নেই। গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

ইসি মো. আলমগীর বলেন, অনেকেই বলেন, এটা একটা কারচুপির মেশিন। আসলে আমরা এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অতীতের নির্বাচনের যে অভিজ্ঞতা নিয়েছি, তাতে দেখেছি ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা তো কারিগরি দিক থেকে এক্সপার্ট না, যারা এক্সপার্ট তারা বলেছেন। সব রাজনৈতিক দলকেও ডেকেছিলাম তাদের কারিগরি টিম এনে পরীক্ষা করে দেখার জন্য।

তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে প্রথমেই যেটা বলা, প্রোগ্রামিং করে ফল উল্টিয়ে দেয়া যায়। তো তাত্ত্বিক দিক দিয়ে যারা বলেন তারা হয়তো ঠিকই বলেন। কিন্তু বাস্তবতার দিক দিয়ে এটা মোটেই ঠিক না।

আপনি বলতেই পারেন, কোনো একটা কোম্পানির ওষুধে ভেজাল থাকতে পারে, কিন্তু সব কোম্পানির ওষুধ ভেজাল না। বিষয়টা হলো, আমাদের যে ইভিএম এটা ভিন্ন ধরনের। অনেকেই বলেন, এটা ভারতের ইভিএমের মতো। আসলে ভারতের সঙ্গে এটার তুলনা করা যায় না। ভারতের ইভিএমে ভোটার আইডেন্টিফিকেশন করে ম্যানুয়ালি। আমাদের ইভিএমে আইডেন্টিফিকেশন করা হয় ইলেকট্রনিক্যালি। যেহেতু আমাদের ভোটার ডাটাবেজ আছে ছবিসহ এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ। কাজেই ভোটার এলেই এ কেন্দ্রের ভোটার, না অন্য কোনো ব্যক্তিÑএটা মেশিনই আইডেন্টিফাই করে। যেটা ভারতের ইভিএমে সুযোগ নেই।

দুই নম্বর হলোÑএ ইভিএমে যে প্রোগ্রামিং করা হয়েছে, তাতে শুধু যোগ করতে পারে। যে প্রার্থী আছে তাদের ভোটটা যোগ করতে পারে। আর কিছু করতে পারে না। প্রোগ্রামিংটা ওইভাবে করা। কাজেই কেউ যন্ত্রে বা বাইরে থেকে ম্যানিপুলেশন করবে সে সুযোগ নেই। কারণ এটার যে চিপ ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে রাইট করা হয়, এটা হলো ওয়ানটাইম ইউজেবল। কাজেই একবার রাইট করা হলে রি-রাইট বা এডিটের কোনো সুযোগ থাকে না।

সাবেক এ ইসি সচিব বলেন, আরেকটা বিষয় হলো ইন্টারেন্টের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই আমাদের ইভিএমের। ব্যালট ইউনিটের সঙ্গে যে সংযোগ দেয়া হয়, এটা কিন্তু কাস্টমাইজ করা। বাজারে কেনা কোনো ক্যাবল, ড্রাইভ; কোনো কিছুই এটার মধ্যে ইনসার্ট করতে পারবেন না। কেবল এ ইভিএমের জন্য যে ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে, সেটা ছাড়া আর কোনো ডিভাইস যোগ করতে পারবেন না।

ম্যানিপুলেশন যে করবেন, এটা কোথায় যে কোনটা যাচ্ছে তা আপনি জানেন না। ম্যানিপুলেট করতে হলে তো আপনাকে বারেবারে প্রোগ্রাম পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এটা কেবল যোগ-বিয়োগ করে, ক্যালকুলেটরের মতো। ক্যালকুলেটরে যেমন প্রোগ্রাম পরিবর্তন করার সুযোগ নেই, আমাদের ইভিএমেও তেমন সুযোগ নেই। ইভিএম নিয়ে যে অপপ্রচার আছে, যারা বলেন তারা না জেনে, না বুঝে বলেন। তারা চাইলে যেকোনো ইভিএমে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

মো. আলমগীর বলেন, ইভিএমে ভোট নেয়ার সুবিধা হলো ভোটের আগে বা পরে ভোট দেয়ার সুযোগ অথবা ভোটার ছাড়া কেউ এসে ভোট দিয়ে যাওয়া সেটার সুযোগ নেই। একটা দুর্বলতা আছে গোপন বুথে যদি ভোটারকে ঢুকতে না দেয়া হয়, এ সুযোগটা আছে। তবে ভোটার যদি কেন্দ্রে না আসেন, সেই সুযোগও নেই। যদি ১০ শতাংশ ভোটার আসে তবে ১০ শতাংশ ভোটই কাস্ট করতে পারবে। আর ব্যালটে ১০ শতাংশ ভোটার এলে শতভাগ ভোট দেয়া সম্ভব। ফলে ইভিএমের মাধ্যমে জালিয়াতি কোনো সুযোগ নেই।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীরা, এজেন্টরা কারচুপিতে সহায়তা করলে বা কারচুপি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাই বলে এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে থেকে বাইরে রাখা যাবে না। এটা কোনো দলই মানবে না। মশারির ভেতরে মশা ঢুকলে মশারি পুড়িয়ে দিলে তো হবে না। মশা তাড়াতে হবে। তেমনই কোনো এজেন্ট অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নিতে হবে।