শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরানের ওপর আরোপিত ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের কোম্পানিগুলোকে রক্ষার উপায় খুঁজছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এর অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার থেকে ১৯৯৬ সালের করা ‘ব্লকিং স্টাটিউট’ আইন সচল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এ জোট। খবর বিবিসি, আলজাজিরা।
ইরানের পরমাণু কার্যক্রম বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা অন্য পাঁচ দেশ ২০১৫ সালে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করে। এ চুক্তির মাধ্যমে ইরান পরমাণু কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। বিপরীতে ইরানের ওপর আরোপ করা সব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় দেশগুলো। নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে মুক্ত হয়ে ইরান বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। ২০১৬ সালে পরমাণু চুক্তি কার্যকরের পর ইইউ দেশগুলোও দেশটির সঙ্গে শত কোটি ডলারের বহু বাণিজ্য চুক্তি করে। কিন্তু ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিকে অন্যায্য দাবি করে গত ৮ মে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে ইইউর ওইসব বাণিজ্যি চুক্তি এখন
ঝুঁকিতে রয়েছে। হাজার হাজার চাকরিও
এখন সংকটাপন্ন।
গত রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করা ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।
ওই নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের কোম্পানিগুলোকে রক্ষায় বৃহস্পতিবার বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় বৈঠকে বসেন ইইউ নেতারা। বৈঠক শেষে ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যে ক্লদ জাঙ্কার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে ইউরোপীয়ান কোম্পানিগুলোকে রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে তাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন কাজ শুরু করা দরকার, আর তাই ১৯৯৬ সালের ‘ব্লকিং স্টাটিউট’ সচল করার প্রক্রিয়া শুরু করছি।’ গতকাল শুক্রবার থেকেই এ আইন কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানান তিনি।
১৯৯৬ সালে কিউবার ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় ‘ব্লকিং স্টাটিউট’ নীতি তৈরি করা হয়। এতে বলা হয় নিষেধাজ্ঞা আইনের ভিত্তিতে কোনো বিদেশি আদালতের রায় ইইউ এর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ‘ব্লকিং স্টাটিউট’ নামের এ নীতি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এর কার্যকারিতা সীমিত হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের এ নীতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে কিউবার সঙ্গে ইউরোপের ব্যবসাকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হতো। তবে মার্কিন কংগ্রেস নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যাংকিং সিস্টেমের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দেওয়ার মতো নতুন আইন পাস করে এ নীতিকে অকার্যকর করে দেয়।
ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারগুলো ইউরোপীয়ান কমিশনের ‘ব্লকিং স্টাটিউট’কে নীতি থেকেও বেশি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখে থাকে। তাই এর নিয়মকানুনগুলো খানিকটা অস্পষ্ট আর প্রয়োগ করাও কষ্টসাধ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সতর্কতা দিতেই এ নীতি ব্যবহƒত হয়।
জাঙ্কার বলেছেন, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে ইরানে বিনিয়োগে প্রথমবারের মতো সহায়তা দেওয়ার জন্য ইউরোপীয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংককে সুপারিশ করেছে ইউরোপীয়ান কমিশন।
২০১২ সালে শাস্তিমূলক অবরোধ আরোপের আগে ইইউ ছিল ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশিধার। ২০১১ সালে ইইউর সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য বড় অঙ্গের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল। অবরোধ আরোপের পর বাণিজ্য পড়ে গেলেও ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির পর আবার তা সচল হতে শুরু করে। ২০১৭ সালে ইরানে ১০ দশমিক ৮ বিলিয়ন পাউন্ড বা ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি করেছে ইইউ। অন্যদিকে ইরান থেকে আমদানি করেছে ১০ দশমিক এক বিলিয়ন পাউন্ড। আগের বছরের চেয়ে এ আমদানি বা রফতানি উভয়ই ছিল দিগুণ। ইরান থেকে ইইউর আমদানির ৭৫ শতাংশের বেশি জ্বালানি। অন্যদিকে ইইউ থেকে ইরান আমদানি করে যন্ত্রপাতি ও পরিবহন সরঞ্জাম।
এদিকে পরমাণু চুক্তির কার্যকরের পর থেকে ইরানের সঙ্গে বড় কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে ইউরোরেপর কয়েকটি দেশ। এগুলোর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাস ক্ষেত্র ইরানের সাউথ পারসের উন্নয়নের জন্য ফ্রান্সের কোম্পানি টোটালের সঙ্গে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি। ইরানে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য নরওয়ের সাগা এনার্জির মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ নির্মাতা এয়াবাস ইরানের কাছে ১০০ জেট বিক্রির চুক্তি করেছে। এছাড়া জার্মানির সিমেন্স, ইতালির প্রতিষ্ঠান এফএস, ফ্রান্সের রেনল্টের মতো বড় কোম্পানির সঙ্গেও ইরানের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।