শেয়ার বিজ ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক সংঘর্ষ দ্রুতই পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের রূপ নিচ্ছে। যুদ্ধের তীব্রতায় ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও চাপে পড়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলা এখন আর সীমিত কোনো সামরিক অভিযান নয়Ñবিশ্লেষকদের মতে, এটি সরাসরি এক দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
গত তিন দিনে ইসরায়েল অন্তত ৭২০টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করছে তেহরান। এর মধ্যে রয়েছে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর, জ্বালানি কেন্দ্র, সামরিক গবেষণা ল্যাব এবং পরমাণু-সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো। তেহরানের আকাশজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ, ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং আতঙ্কিত মানুষের ছুটোছুটি যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রকাশ করে দিয়েছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এই হামলাকে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়েছে এবং বলছে, এটা একটি ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত সামরিক প্রতিশোধ।
ইরানও পাল্টা শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ব্যালিস্টিক, ক্রুজ ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টিতে কেঁপে উঠেছে ইসরায়েলের তেল আবিব, বাত ইয়াম ও হাইফার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো। শুধু বাত ইয়ামেই একটি আবাসিক ভবনে হামলায় ১০ বছর বয়সী এক শিশু, দুই প্রবীণ নারীসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। তেল শোধনাগার, গবেষণাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ইরানি হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা এমডিএ।
ইসরায়েলের সুপরিচিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম অতিরিক্ত চাপে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইপারসনিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার জন্য আয়রন ডোম যথেষ্ট নয়, যদিও ইসরায়েলের ‘অ্যারো-৩’ ও ‘ডেভিড সিং’ নামের আরও উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে। তবুও সমন্বিত ও একযোগে চালানো ইরানি আক্রমণে কিছু প্রতিরক্ষা ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এই সংঘর্ষে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইরানের মিত্র ইয়েমেনের হুতিদের অংশগ্রহণ। তারা সরাসরি স্বীকার করেছে, ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের আঞ্চলিক সহযোগিতা যুদ্ধের পরিধি আরও বিস্তৃত করে দিচ্ছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীও ভবিষ্যতে এই সংঘাতে যুক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতি জোরদার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ভিয়েনায় জরুরি বৈঠক ডেকেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রত্যেকে আলাদাভাবে দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানালেও তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। ট্রাম্প একদিকে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অন্যদিকে বলেছেন, তিনি এই যুদ্ধ থামানোর জন্য ‘চুক্তির সম্ভাবনা’ দেখতে পান।
ইরান হুঁশিয়ার করে বলেছে, ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ না হলে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘তারা থামলে আমরাও থামব। কিন্তু যদি না থামে, তাহলে এই যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হবে।’
ইসরায়েলি নেতারা কিছুটা ভিন্নসুরে বলছেন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘আমরা অস্তিত্বের লড়াই চালাচ্ছি। যতদিন প্রয়োজন, ততদিন ইরানে আঘাত হানব।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ‘তেহরান জ্বলবে,’ এমনকি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিও ‘হামলার সীমার বাইরে নন’ বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘এখনও যদি কোনো একটি পক্ষ যুদ্ধ থামাতে রাজনৈতিক উদ্যোগ না নেয়, তবে এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়বে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে।’ এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য নতুন করে যুদ্ধবিমান পাঠানোর কথা জানিয়েছে এবং সাইপ্রাসসহ অন্যান্য রাষ্ট্র মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। সাইপ্রাস জানিয়েছে, ইরান তাদের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে কিছু বার্তা পাঠাতে চেয়েছে।