শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইরানের তেল আমদানিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে কয়েক সপ্তাহ আমদানি বন্ধ রাখার পর নিজস্ব মুদ্রায় ভারত আবারও দেশটি থেকে তেল ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে। দেশ দুটির একাধিক সূত্র গত সোমবার এ তথ্য জানায়। খবর: দ্য প্রিন্ট।
সূত্র জানায়, লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি আবারও ক্ষমতায় আসার পর ইরান থেকে তেল আমদানির ব্যাপারে পরামর্শ করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার তেহরানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের একজন কর্মকর্তা বলেন, নয়াদিল্লি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অনুসরণে উৎসাহী নয় বরং ইরান থেকে তেল আমদানিতে আগ্রহী। তবে এর পরিমাণ হবে সীমিত। এ বিষয়ে আলোচনা করে নয়াদিল্লি ও তেহরান এমন পদক্ষেপ নিতে চায় যা দেশদ্বয়ের মধ্যে আবারও তেল বাণিজ্য শুরু করতে সহায়তা করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গত নভেম্বরে। কিন্তু ভারত, তুরস্ক, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ মোট আটটি দেশকে ছয় মাসের জন্য ছাড় দেয়। গত ২ মে নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে ভারত ইরান থেকে তেল আমাদানি বন্ধ করে দেয়। এর পরেই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, লোকসভা নির্বাচনের পর এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরানের পাসারগাদ ব্যাংক মুম্বাইয়ে একটি শাখা খুলতে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে ভারত ইরানি তেল ক্রয়ের মূল্য পরিশোধ করবে। পাসারগাদ ব্যাংকে ভারতীয় রুপিতে মূল্য পরিশোধ করা হবে এবং তা কীভাবে ইরান কাজে লাগাবে সেটা তাদের বিষয়। তবে অতিরিক্ত তেলের চাহিদা পূরণে ভারত জুনে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াবে।
উল্লেখ্য, ইরানের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার ভারত। অন্যদিকে ভারতের জন্যও ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা অনেকটা সস্তা; কারণ পরিবহন খরচ ও দাম দুটোই কম পড়ে। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি থেকে তেল কিনতে পারছে না ভারত। এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি দিল্লি সফর করলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ‘গঠনমূলক’ আলোচনা করেন। সেখানে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পরই গুরুত্বপূর্ণ তেল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান সুষমা।
পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, ভারত যাতে ইরান থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখে, সে জন্য তেহরান দিল্লিকে চাপে রাখতে চাইছে, আর এ জন্য দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চাবাহার বন্দরকে। গত চার মাসে দুবার দিল্লি সফর করলেন জাভেদ জারিফ। কিন্তু ইরান ইস্যু ভারতের জন্য জটিল এক কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যখন নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়, তখন ভারতসহ আট দেশকে ইরান থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে সাময়িক ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি মে মাসের শুরুর দিকে সেই অব্যাহতির মেয়াদও ফুরিয়েছে। এ পরিস্থিতি ভারত ও ইরান দু’দেশকেই সমস্যায় ফেলে দিয়েছে।
দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় ইরান বিশেষজ্ঞ কামার আগা বলেন, বস্তুত ইরান ভীষণভাবে চায় ভারত তাদের কাছ থেকে আগের মতো তেল কেনা বজায় রাখুক; কিন্তু ভারতের সমস্যা হলো তাদের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর সাংঘাতিক চাপ। তিনি বলেন, ভারত বরাবর বলে থাকে তাদের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি বলব ভারতের সেই পররাষ্ট্রনীতিই এক কঠিন পরীক্ষায় পড়েছে।

Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 9:44 am
ইরান থেকে নিজস্ব মুদ্রায় তেল আমদানির পরিকল্পনা করছে ভারত
আন্তর্জাতিক ♦ প্রকাশ: