Print Date & Time : 29 August 2025 Friday 12:19 am

ইলিয়াস ব্রাদার্সের পাঁচ পরিচালকের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাউথইস্ট ব্যাংকে ৮৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা খেলাপির দায়ে মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্সের পাঁচ পরিচালককে পাঁচ মাসের সাজা দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।

তারা হলেনÑমেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্সের (এমইবি) গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল আলম, চেয়ারম্যান নুরুল আবসার, পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আলম, শামসুল আলমের স্ত্রী ও পরিচালক কামরুন নাহার বেগম, নুরুল আবসারের স্ত্রী ও এবং পরিচালক তাহমিনা বেগম।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৭৪ কোটি ৮০ হাজার টাকা খেলাপি আদায়ের দাবিতে ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অর্থঋণ আদালতে মামলা করে সাউথইস্ট ব্যাংক। বিবাদীরা কোনো আপিল না করা এবং কোনো টাকা পরিশোধ না করায় তাদের বিরুদ্ধে রায় দেন আদালত। পরে ৮৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আদায়ের দাবিতে মামলা দায়ের করে ব্যাংক।

খেলাপি ঋণ পরিশোধে বিবাদীরা এগিয়ে না আসায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে তারা রিট করলে তা প্রত্যাহার করে সমান তিন কিস্তিতে ৪২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন আদালত। তারপরও কোনো টাকা পরিশোধ করেনি ইলিয়াস ব্রাদার্স। তাই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে বাধ্য করার প্রয়াস হিসেবে পাঁচ পরিচালকের প্রত্যেককে পাঁচ মাস করে দেওয়ানি আটকাদেশ প্রদান করা হলো।

উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৮৩ কোটি টাকা খেলাপির দায়ে মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্সের পাঁচ পরিচালককে পাঁচ মাসের সাজা দিয়েছেন আদালত। আদালতের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২০১৫ সালে করা জারি মামলা নং-৯৩/১৫-এর শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ডিক্রিদার ব্যাংকের মোট ১৮৩ কোটি ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৩ টাকা পাওনা রয়েছে। দায়িক পক্ষ আদালতে সময়ের আবেদন করলে আদালত সেটি নামঞ্জুর করে পাঁচ পরিচালককে পাঁচ মাসের সাজা প্রদানের আদেশ দেন।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন ব্যাংকে ইলিয়াছ ব্রাদার্সের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে ২৮০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ২৭০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকে ৭৩ কোটি, ইসলামী ব্যাংকে ৬৩ কোটি, এবি ব্যাংকে ৬২ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ৫৫ কোটি, সিটি ব্যাংকে ৫৫ কোটি, ব্যাংক এশিয়ায় ৩৯ কোটি, ওয়ান ব্যাংকে ৩০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ২৪ কোটি, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকে ১৮ কোটি, পূবালী ব্যাংকে ৭ কোটি এবং এক্সিম ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৪ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, ইলিয়াস ব্রাদার্সের শুরুটা ছিল খুব ভালো। স্বাধীনতার আগে ভাইকে নিয়ে ‘ইলিয়াস ব্রাদার্স’-এর শুরু করেন মো. ইলিয়াস। এরপর ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে রূপ পায়। শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটির মূল বিনিয়োগ ছিল ভোগ্যপণ্যে। এ খাতে স্বাধীনতার আগের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল স্বাধীনতার পরও। ইলিয়াস ব্রাদার্সের নামের পাশে একে একে যুক্ত হতে থাকে জিপি/সিআই শিট, গ্লাস শিট, সয়াবিন তেল, কাগজ ও বোর্ড, তৈরি পোশাক, ব্রিকফিল্ড। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে ‘দাদা’ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল ও মিনারেল ওয়াটারে। প্রচুর লাভও আসতে থাকে এসব ব্যবসা থেকে।

‘দাদা’ ব্র্যান্ডে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন মো. ইলিয়াস। কিন্তু তার সেই অর্জন ধরে রাখতে পারেনি ছেলে ও নাতি। মূলত নব্বইয়ের দশকে ইলিয়াসের মৃত্যুর পর শুরু লোকসানের গল্পের। ইলিয়াসের মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে আসেন নুরুল আবছার ও সামসুল আলম। ব্যবসা সম্প্রসারণে নিতে থাকেন একের পর এক ব্যাংকঋণ। কিন্তু তখন ব্যবসায় চলছে ভাটার টান। নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় আসে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প গ্রুপটির নাম।

শেষ দিকে প্রতিষ্ঠানের হাল ধরার চেষ্টা করেন ইলিয়াসের নাতি শোয়েব রিয়াদ। নতুন কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ করেনও তিনি। কিন্তু এতে এতটুকুও কমেনি ঋণের বোঝা। সব মিলিয়ে লোকসানের ধাক্কায় এখন অস্তিত্ব সংকটে ‘ইলিয়াস ব্রাদার্স’।