Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 9:23 am

ইলিশের স্যুপ-নুডলস তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন

প্রতিনিধি, বাকৃবি: ইলিশ বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি সুস্বাদু, জনপ্রিয় ও মূল্যবান মাছ। ইলিশের দাম খুব বেশি এবং বর্ষা-পরবর্তী সময় এর প্রাচুর্য কম হওয়ায় বছরের অন্যান্য সময় সাধারণ মানুষের পক্ষে এটি কিনে খাওয়া কষ্টসাধ্য। এছাড়া বিদেশে এ মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে বাড়তি উৎপাদন দিয়েও বিশ্বব্যাপী সবার ইলিশ-চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই এবার ইলিশ থেকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য পণ্য তৈরি করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক অধ্যাপক ড. একেএম নওশাদ আলম ও তার গবেষক দল।

এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি এরই মধ্যে ইলিশ মাছ থেকে পাউডার ও কিউব তৈরি করেছেন, যা দিয়ে তিনি পরবর্তীকালে স্যুপ ও নুডলস বানিয়েছেন। তিন বছরেরও অধিক সময় ধরে গবেষণা করে তিনি এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে এসব তথ্য জানান প্রধান গবেষক ড. একেএম নওশাদ আলম। ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে গবষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষক দলর অন্য সদস্যরা হলেন আল শাহরিয়ার ও মো. সাজেদুল হক।

ড. নওশাদ আলম বলেন, ইলিশ অধিক আমিষ ও চর্বির মাছ। তবে ইলিশের চর্বি মোটেও ক্ষতিকর নয়। চর্বিতে বিদ্যমান ‘ওমেগা-৩’ নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ইলিশের স্বাদের জন্য দায়ী। এ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে হƒদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। ফলে উদ্ভাবিত ইলিশ-পণ্য দিয়ে সারাবছর ক্রেতারা ইলিশের স্বাদ পূরণ করতে পারবেন।

উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত চর্বির জন্য ইলিশ মাছ শুঁটকি করা ছাড়া দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। ইলিশের চর্বির সংরক্ষণ সক্ষমতা খুবই কম বলে ইলিশ-পণ্য তৈরি করে কক্ষ তাপমাত্রায় (২৫-৩০ সে.) কিংবা ফ্রিজে -২০০ সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় না।

অন্যদিকে ইলিশে বিদ্যমান অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড না সরালে তৈরি পণ্যটি কক্ষ ও হিমায়ন তাপমাত্রায় জারিত হয়ে পচে দুর্গন্ধময় হয়ে যায়। জারণ বন্ধ করার জন্য দরকার ছিল একটি কার্যকর ও উপকারী ভেষজ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ইলিশের চর্বিকে স্থিতিশীল করার জন্য এ নতুন উদ্ভাবিত ভেষজ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টটি হচ্ছে গাজর থেকে আহরিত ক্যারোটিনয়েড বা বিটা-কেরোটিন, যার মাধ্যমে মাছের স্বাদ ও গন্ধকে অপরিবর্তিত রেখে এই প্রথম ইলিশ-পাউডার ও ইলিশ কিউব তৈরি করা হয়েছে।

উদ্ভাবিত পণ্য সম্পর্কে গবেষকরা বলছেন, নতুন পণ্যে আমিষ, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি আ্যসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও অন্যান্য খনিজসহ ইলিশ মাছের সব পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন অক্ষুণœ রয়েছে। এক হাজার টাকা দামের একটি ইলিশ মাছ থেকে ছোট আকৃতির প্রায় ২০০ কিউব তৈরি করা সম্ভব। প্রতিটি কিউবের বাজারমূল্য ২০ টাকা। একটি কিউব দিয়ে ইলিশের হুবহু স্বাদের এক বাটি স্যুপ তৈরি করা সম্ভব। ইলিশের স্বাদ অপরিবর্তিত রেখে কিউবগুলোকে রেফ্রিজারেটরে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।