Print Date & Time : 16 August 2025 Saturday 10:53 pm

ইসলামী ধারার ব্যাংকে প্রবাসী আয় কমেছে সাড়ে ২৭ শতাংশ

রোহান রাজিব : ডলার সংকটের সময় পুরো ব্যাংক খাতে রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স আহরণে প্রধান ভূমিকা রাখা ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সাড়ে ২৭ শতাংশ প্রবাসী আয় কম এসেছে। রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের তিনটিতেই পতন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

ব্যাংকাররা জানান, ডলারের দর বাজারভিত্তিক বলা হলেও এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করে দিচ্ছে। এবিবি ও বাফেদার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত ডলার কেনার দর এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা; আমদানিতে ১১০ টাকা। তবে এ রকম দরে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ হুন্ডিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে।

বর্তমানে হুন্ডিতে অর্থ পাঠিয়ে প্রবাসীরা এক ডলারের বিপরীতে ১১৭ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো খরচ করতে হচ্ছে না। কিন্তু ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে গড়ে খরচ হয় চার শতাংশ। ফলে সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পরও হুন্ডির সমান পাচ্ছেন না তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির মাধ্যমে হুন্ডির প্রবণতা না কমিয়ে এভাবে শুধু ব্যাংকের ওপর চাপ দিলে বাজার আরও অস্থির হবে বলে মনে করেন তারা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২২ হাজার ১৯২ কোটি টাকার। আগের প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৬০৯ কোটি টাকার। অর্থাৎ তিন মাসে প্রবাসী আয় কমেছে আট হাজার ৪১৭ কোটি টাকা বা সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে এক বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ছয় হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা বা ৪১ দশমিক ২০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলোয় প্রবাসী আয় আসার হারও কমেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে আসা মোট প্রবাসী আয়ের ৫৫ শতাংশ এসেছিল শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে যা কমে হয়েছে ৩৮ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয়ের হার কমেছে ১৭ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সার্বিকভাবেই প্রবাসী আয় কম এসেছে।

ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। এ ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সে আহরণ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ ব্যাংকের রেমিট্যান্সে অবদান ছিল ৪১ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ দশমিক ৫১ শতাংশে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে আল আরফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি পতন হয় এ ব্যাংকে। প্রথম প্রান্তিকে এ ব্যাংকের অবদান ছিল ৪৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে রেমিট্যান্স আহরণে অবদান কমে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ১৬ শতাংশে। শাহ্জালাল ইসালমী ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে। প্রথম প্রান্তিকে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ অবদান ছিল। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে অবদান ছিল যথাক্রমে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

যদিও কিছু ব্যাংকের রেমিট্যান্স আহরণও বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকের শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশে উঠেছে। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। এর বাইরে এক্সিম ব্যাংকের শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১ দশমিক ৫৩ থেকে ২ দশমিক ১০ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী ধারার এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, পুরো ব্যাংক খাতের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। এর প্রভাব ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতেও পড়েছে। তবে ইসলামী ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স কমার অন্যতম কারণ তারল্য সংকট। কারণ ডলার কিনতে টাকার প্রয়োজন হয়। কিছু ব্যাংক চরম তারল্য সংকটে ভুগছে। এসব ব্যাংক তারল্য সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআরআর রাখতে পারছে না। তারল্য পরিস্থিতি ভালো না থাকার ডলার কিনতে পারছে না। এ জন্য ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স কমেছে।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স আসুক বা না আসুক, ব্যাংক খাতে এলেই হলো। দেশের রেমিট্যান্স কমা উচিত নয়। গত মাসেও ২১ শতাংশের বেশি কমেছে। রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ভালো লক্ষণ না। এটা নিয়ে সব পর্যায়ের ভাবা উচিতÑকীভাবে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো যায়।

গত এক বছরের ধরে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত তারল্য ছিল ২১ হাজার ৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে তা কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ৮৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

রেমিট্যান্স ও তারল্য প্রবাহ কমলেও ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে আমানত ও বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে আমানত দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা, যা মার্চ শেষে ছিল চার লাখ ১১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে আমানত বেড়েছে ১৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

অপরদিকে জুন শেষে বিনিয়োগ (ঋণ ও অগ্রিম) দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। আর মার্চ শেষে ছিল চার লাখ ১২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। তিন মাসে বিনিয়োগ বেড়েছে ৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ২০ শতাংশ।