২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর

ইসলামী ব্যাংকের আমানত কমেছে ১১,৮৬৪ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের আমানত কমেছে ১১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ দিকে অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার খবর প্রচারের পর থেকেই ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের আমানত তুলে নেয়ার প্রবণতা শুরু হয়, যার প্রভাব পড়েছে বছর শেষে। ব্যাংকটির গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকের আমানত ছিল এক লাখ ৫২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বর শেষে কমে দাঁড়ায় এক লাখ ৪০ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের আমানত কমেছে ১১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। তবে গত বছরের শেষ তিন মাসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের আমানত কমলেও ঋণ বেড়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকের ঋণ বা বিনিয়োগ ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বরে বেড়ে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানের ঋণ বা বিনিয়োগ এক হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বেড়েছে। আমানত কমে যাওয়ার বিপরীতে ঋণ বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্যাংকটি গত বছরে নগদ অর্থের সংকটে ছিল।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়। এ কারণে অনেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে থাকা নিজেদের সঞ্চয় তুলে ফেলেন। এরই ফলাফল হিসেবে তিন মাসে কমে যায় ব্যাংকটির আমানত। ফলে উচ্চ সুদে টাকা ধার ও আমানত নিতে হয় ব্যাংকটিকে। ব্যাংকটির আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে ও আমানতকারীদের আশ্বস্ত করতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত বছর ব্যাংকটিতে ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অনিয়মের ঘটনা প্রকাশ পায়। নামে-বেনামে খোলা হয়েছে, এমন কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার ঘটনা ঘটে। ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদ, রাজশাহী শাখা, রাজশাহী নিউমার্কেট, পাবনা এবং রাজধানীর গুলশান, গুলশান-২, ফার্মগেট, নবাবপুর রোড ও বারিধারা শাখা থেকে এসব ঋণ দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক পরিদর্শন করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা যায়। আবার অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকটিকে যেসব পরামর্শ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তা থেকেও পিছু হটে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছর শেষে ব্যাংকটিতে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ প্রায় ৫৬ টাকা ঋণাত্মক ছিল। অর্থাৎ বড় ধরনের নগদ অর্থের সংকট ছিল ব্যাংকটির। অথচ ২০২১ সালে ব্যাংকটিতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। তখন ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ ছিল ৪১ টাকার বেশি। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে এক বছরে কমেছে ৯৭ টাকার বেশি।

আমানত কমে ঋণ বাড়লেও বিদায়ী বছরে ইসলামী ব্যাংকের নিট মুনাফা হয়েছে ৬১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে এ ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ৪৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। আলোচ্য হিসাববছরে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৮৩ পয়সা। আগের হিসাববছরে যা ছিল ২ টাকা ৯৯ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট

 সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ২১ পয়সায়। আগের হিসাববছর শেষে যা ছিল ৪০ টাকা ৮২ পয়সায়।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ২০২২ সালের জন্য শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সুপারিশ করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। ঘোষিত লভ্যাংশ ও আলোচ্য হিসাববছরের অন্যান্য বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে আগামী ২২ জুন ভার্চুয়াল মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করেছে ব্যাংকটি। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ মে।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরে যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি ঋণ বিতরণ করে ইসলামী ব্যাংক, যার মুনাফা যুক্ত হয়েছে ব্যাংকটির নিট আয়ে। তবে এর বিপরীতে যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি আমানত কমে গেছে ব্যাংকটির। এর ফলে আমানতকারীদের মুনাফাও কম দিতে হয়েছে। একদিকে ঋণ দিয়ে বেশি মুনাফা আয় ও আমানত কমে যাওয়ায় মুনাফা বাবদ খরচ কমে যাওয়ায় ব্যাংকটির আয় বেড়েছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য জানতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। পরে হোয়টসঅ্যাপে এ বিষয়ে প্রশ্ন লিখে পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।