নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের সর্ববৃহৎ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকায় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মনিরুল মাওলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত।
এদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন সংস্থাটির উপপরিচালক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত।
গত রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে মনিরুল মাওলাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ মনিরুল মাওলার বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে নথিপত্র তৈরি এবং তা ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি ইসলামী ব্যাংকের মোট ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং আত্মসাৎকৃত অর্থের প্রকৃত উৎস ও প্রকৃতি গোপন করতে তিনি অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করে এস আলম গ্রুপ। ওই সময়ে ব্যাংকটির এমডি ছিলেন মুনিরুল মাওলা। গত গতবছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের পরও ইসলামী ব্যাংকের এমডি হিসেবে টিকে থাকতে চেষ্টা চালিয়ে যান মাওলা।
তবে ব্যাংকটির কর্মীদের আন্দোলনের মুখে ইসলামী ব্যাংকের এমডির চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় মুনিরুল মাওলাকে।
আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা জানান, মুনিরুল মাওলার কারণে দিন দিন ব্যাংকটিতে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে যে ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ব্যাংকটিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান মুনিরুল মাওলা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তাকে এমডি পদে নিয়োগ দেয় পরিচালনা পর্ষদ।
মনিরুল মওলার ব্যবস্থাপনায় থাকাকালেই ব্যাংকটিতে বড় ধরনের অনিয়ম হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এস আলম গ্রুপকে অনৈতিকভাবে ঋণ পাইয়ে দিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দুদক ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম এবং এমডি মনিরুল মওলাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক থেকে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার অন্য বিবাদীদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমদ, সাবেক পরিচালক মো. ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, মো. সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক মো. কামরুল হাসান ও সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ।
বিবাদী হিসেবে আরও আছেন ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কেকিউএম হাবিবুল্লাহ, সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জিএম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন, ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমানের এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাক্তাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাক্তাই শাখার প্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনজুর হাসান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী এবং দক্ষিণের অপর জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ।