ইসি আইনের খসড়া না পড়েই মন্তব্য বিএনপির: তথ্যমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নির্বাচন কমিশন গঠনের আইনের খসড়া না পড়েই বিএনপি নেতারা নানা মন্তব্য করেছেন। এটি তাদের রাজনীতির অন্তঃসারশূন্যতা এবং সবকিছুতে ‘না’ বলার বাতিকেরই প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে আইন প্রস্তুত করার জন্য খসড়া মন্ত্রিসভায় পাঠিয়েছে, মন্ত্রিসভা সেই আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে।’ সূত্র: বাসস।

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে একটি আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা বলা আছে। কিন্তু ৫০ বছরেও সেই আইন হয়নি। রাষ্ট্রপতি কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে সংলাপ করেছেন, সেখানে বেশিরভাগ দলই একটি আইন প্রণয়নের কথা বলেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যায়।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কিন্তু সরকারের এই ভালো উদ্যোগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য গত মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সেখানে তাদের বক্তব্যে মনে হয়েছে নজরুল ইসলাম খান সাহেব আইনের খসড়াটি পড়েননি। তাদের দলের যে নেতারা সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটি তৈরি করে দিয়েছেন, তারাও পড়েননি।’

তিনি বলেন, ‘না পড়েই নজরুল ইসলাম খান সাহেব নানা মন্তব্য করেছেন, এখানে কোনো বেসরকারি লোক বা কোনো আইনজ্ঞকে নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ আইনের খসড়ায় স্পষ্ট বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যিনি ২০ বছর ধরে সরকারি কিংবা বিচারবিভাগীয় পদে বা আধা সরকারি কিংবা বেসরকারি পদে কাজ করেছেন, তাকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে। বেসরকারি যখন বলা হয়, সেখানে আইনজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ সবাই অন্তর্ভুক্ত।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একই সংবাদ সম্মেলনে আবার নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, এই সরকারের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবেন না। অর্থাৎ নির্বাচন যেভাবেই হোক, তারা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছেন। কেউ যখন নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকেন, তখন যেকোনো ভালো উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কিন্তু বিএনপির সবকিছুতেই যে না বলার বাতিক, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি, যেটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

লবিস্ট ফার্ম নিয়ে একটি দৈনিকে প্রকাশিত কলামের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু একটি শীর্যস্থানীয় পত্রিকার প্রথম পাতায় সংবাদ বিশ্লেষণ নামে বিএনপিকে রক্ষা করার জন্য এটি ছাপানো হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। দেশের রপ্তানি, ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন সরকার পিআর ফার্মের মাধ্যমে লবি করে থাকে, বাংলাদেশ সরকারও করে। কিন্তু বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করা এবং আজকে যে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে উজ্জ্বল হয়েছে, সেটিকে ম্লান করার হীন উদ্দেশ্যে অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাহেব ঠিকই বলেছেন, নয়া পল্টনের অফিসের ঠিকানা দিয়ে যে লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে বিএনপি চুক্তি করেছিল, সেই লবিস্ট ফার্মকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা তারা দিয়েছে। শাহরিয়ার আলম আরও একটি কথা বলেছেন, বিএনপির মোট অর্থ ব্যয় প্রায় পৌনে চার মিলিয়ন এবং বিএনপি আরও ভিন্ন ভিন্ন নামে, ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা দিয়েও লবিস্ট নিয়োগ করেছে, এখন পর্যন্ত অনুসন্ধানে যেটুকু পাওয়া গেছে, তারা পৌনে চার মিলিয়ন ডলার এই ক্ষেত্রে ব্যয় করেছে। এই টাকা তারা কোথা থেকে পেল, এর হিসাব কি তারা নির্বাচন কমিশনে দিয়েছে, এই টাকা বিদেশে পাঠানোর জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়েছে, কোনোটাই তো নয়। তাহলে এই অপকর্মকে ঢাকার অপচেষ্টা সেটি সত্যিই দুঃখজনক। সুতরাং এখানে সংবাদ বিশ্লেষণের নামে বিএনপির এই অপকর্মকে ঢাকার অপচেষ্টা করা হয়েছে। একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার জন্য সেটি কতটুকু যৌক্তিক, সে প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়।’ এ সময় নারায়ণগঞ্জে মেয়র পদে পরাজিত প্রার্থী তৈমূর আলমকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যদিও সেটি বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয়, তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, বিএনপি কম্বল বাছতে গিয়ে কম্বলটাই না জানি উজাড় হওয়ার পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। তৈমূর আলম খন্দকার যে ভোট পেয়েছেন, তাতে আমার মনে হচ্ছে তার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা আছে। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তার ভূমিকা প্রশংসনীয় এবং নারায়ণগঞ্জে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আসলে বিএনপির গাত্রদাহ হচ্ছে যে, কেন এত সুন্দর নির্বাচন হলো এবং তা সারাদেশ কর্তৃক প্রশংসিত হলো। সেটার দায় তৈমূর আলম খন্দকারের ওপর দিতে চাচ্ছে। সে কারণে তাকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে বিএনপি কুমিল্লার মেয়রসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় নানাজনকে নানা পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ও বহিষ্কার করেছে।’