Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 1:27 am

ই-কমার্সে শৃঙ্খলা আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

‘রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার: ২ লাখ ৯৮ হাজার অনিবন্ধিত অনলাইন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। নীতিনির্ধারকদের কাছেও এটি গুরুত্ব পাবে। এতে এমন কিছু তথ্য আছে, যেগুলো কোনোভাবেই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যেমন, দেশে তিন লাখের বেশি ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ব্যবসা থাকলেও নিবন্ধিত মাত্র ১ হাজার ৪৯৬টি, অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে চলছে এফ-কমার্স ব্যবসা, আটটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহক থেকে নেয়া প্রায় ৬৬১ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এসব তথ্যে প্রমাণিত হয় দেশে অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় তদারকি নেই। ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ব্যবসার পরিধি বাড়লেও ভোক্তা ঠকানো ও প্রতারণা—দুটোই চলছে সমানতালে।

কভিডকালে তো বটেই, কভিডের আগেও ব্রডব্যান্ড টেকনোলজির প্রসার, মোবাইল টেলিকম ও ইন্টারনেটের বিকাশ এবং সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল খাতকে উৎসাহ দেয়ায় দেশে ই-কমার্স ও এফ-কমার্সেরও বেশ বিকাশ হয়েছে। কেমন বিকাশ ঘটেছে, তা ভোক্তা ও গ্রাহক ভালোই টের পেয়েছেন। পণ্য কিনে ভোক্তাদের ঠকে যাওয়া, বিক্রেতা কর্তৃক নিম্নমানের পণ্য প্রদান, টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়া, পণ্য বিক্রির পরেও গ্রাহক কর্তৃক পণ্য গ্রহণ না করা বা ফিরিয়ে দেওয়াসহ কিছু ই-কমার্স কোম্পানির অনেকটা ব্যাংকের মতো আচরণ করার অভিযোগ অনেক। এমন অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স প্রক্রিয়া সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য কয়েক দফা নির্দেশিকা জারি করেছে। এতে আশা করা হয়েছিল, ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে আওতায় আসায় ডিজিটাল কমার্স পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে।

কিছুটা স্বচ্ছতা যে আসেনি তা নয়, তবে ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড ও ক্যাশ ভাউচারে প্রতারণা বেড়েছে। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য বা সেবা কেনার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে না ঠিকই, তবে চটকদার অফারের মাধ্যমে ফাঁদ পাতা হচ্ছে। স্বচ্ছতার জন্য ব্যবসায় লেনদেনসংক্রান্ত সব তথ্য অন্ততপক্ষে ছয় বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত যেকোনো সংস্থার চাহিবামাত্র তা সরবরাহ করার বিধানও আছে, তবু প্রতারণা থামানো ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, নিরাপদ ডটকমসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দেশের কয়েক লাখ গ্রাহকের কয়েক হাজার কোটি টাকা আটকে পড়েছে। এসব গ্রাহকের মধ্যে যেমন আছেন ব্যক্তিপর্যায়ের ক্রেতা, তেমনি রয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের সরবরাহকারী কোম্পানি। সরবরাহকারীরা বাকিতে পণ্য দিয়ে টাকা পায়নি। এ ছাড়া রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মার্কেট প্লেস ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করা দেশের ছোট ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা।

যেকোনো অভিযোগপ্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করা হলে বিপুলসংখ্যক সেবাগ্রাহীতাকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্দেশিকা জারিতেই সেবা সীমিত রেখেছে। কিন্তু বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। বাংলাদেশের মতো অনভ্যস্ত স্বল্পশিক্ষিত মানুষের দেশে শুধু ভোক্তা সচেতন করে ই-কমার্সের প্রতারণা রোধ করা যাবে না। তাই সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।