Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 7:13 pm

ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: আগামী পবিত্র ঈদুল আজহার বাজারকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় কোরবানির পশু প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। এই বছর সাতক্ষীরা জেলায়  কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে এক লাখ ৫৭৭টি পশু। এসব পশু মানুষের বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন খামারে লালনপালন করছেন খামারিরা। পশুখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব পড়তে পারে আগামী কোরবানির হাটে।

জেলার বিভিন্ন প্রান্তি খামার মালিক ও পারিবারিকভাবে পশু পালনকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী কোরবানির বাজারকে কেন্দ্র করে পশু মালিক, ব্যবসায়ী ও কোরবানিদাতারা হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। সাপ্তাহিক হাট, পাড়া-মহল্লায় গরু-ছাগল ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে। কম দামের আশায় আগে থেকে অনেকেই পশু কিনতে বায়না করে রাখছেন। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাবিÑপশুখাদ্যের দামের প্রভাব পড়বে এবারের কোরবানির গরুর হাটে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার এবার  কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৭০৮টি। এদিকে, জেলায় চাহিদা রয়েছে এক লাখ ৫৭৭টি। এর মধ্যে গরু ৪৫ হাজার ২৬৫টি, মহিষ রয়েছে ৭৩৭টি ও ছাগল ৭৬ হাজার ৫৯২টি, ভেড়া রয়েছে ৬ হাজার ৩১১টি। সংশ্লিষ্টরা বলছে, অন্যান্য বছরের মতো এবারও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় পশু বেশি রয়েছে।

সদর উপজেলার মাগুরা গ্রামের খামারি আহাদ আলী বলেন, আমার খামারে বর্তমান কোরবানিযোগ্য পশু প্রায় ৩০টি। পশুখাদ্যের দাম বড়ায় এবার লাভের পরিমাণ কম হবে। তারপরও আমরা প্রতি বছর পশু পালন করছি। সেজন্য আমাদের অন্য কোনো উপায় নেই। যেহেতু আমার পরিবার এর ওপর নির্ভরশীল সে কারণে আমাদের বিকল্প নেই। যদি ভারতীয় গরু কোরবানির সময় না আসে তাহলে আমাদের খামারিরা লাভবান হবে।

খামারি মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি ১৯৯৪ সাল থেকে গরু পালন করছি। এই বছর ৬০টি মতো কোরবানির জন্য গরু আমার খামারে প্রস্তুত আছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর (পশুখাদ্য) খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরুর দাম বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক। গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি না হলে খামারিরা বাঁচবে না। পশুর হাটে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। শহরের ক্রেতাদের রাখার জায়গা না থাকায় রা বেশিরভাগ কোরবানির কাছাকাছি সময়ে এসে পশু কেনেন। অনেকে গরু-ছাগল কিনে খামারি ও অথবা পালনকারীর বাড়িতে রাখেন।

তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের খামারি আরেফিন জালাল বলেন, এবার  কোরবানির পশুর দাম বাড়বে। পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। আগামী কোরবানির ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে পশু বিক্রির চেষ্টা করব। যদি সম্ভব না হয় এক সপ্তাহ আগে হাটে তুলব।

 আশা করছিÑএবার পশুর দাম ভালোই পাব।

সদর উপজেলার বড় পশুহাট আবাদেরহাটের ইজারাদার হাবিবুর রহমান হবি বলেন, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার আবাদের হাট বসে। হাটের দিনে কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার হাট আরও বড় হবে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। ঈদের ১০ থেকে ১৫ আগে হাট জমে উঠবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় বিগত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২৯ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। দানাদার জাতীয় খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হাওয়ায় সাতক্ষীরার খামারিরা ঘাসের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। ঘাস পাঁচ থেকে সাত টাকা কেজি এবং দানাদার খাবার জাতীয় ৫৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রকৃত খামারিরা মোটামুটি প্রায় ৭০ ভাগ ঘাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এর ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছে। গত বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর বাজার আশা করছি স্বাভাবিক থাকবে।