নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: স্বাধীনতা দিবস, সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং ঈদের আগে ও পরে মোট ৫ দিন ছুটিসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১১-১২ দিনের টানা বন্ধ। এ বন্ধে দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক, আমদানি ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। ফলে বন্দর থেকে সময়মতো আমদানি কনটেইনারবাহী পণ্য খালাস স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম কনটেইনার খালাস হবে। এতে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের স্তূপ জমবে। অন্যদিকে কারখানার উৎপাদিত পণ্য সরবরাহও ব্যাপক আকারে ব্যাহত হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দেশের আমদানি ও রপ্তানির প্রায় ৯২ শতাংশ দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়। এর মধ্যে শিল্পপণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ কনটেইনারের আনা রকমারি পণ্যসামগ্রী আমদানি এবং দেশের উৎপাদিত পোশাক খাতের পণ্যসামগ্রীসহ পণ্য কনটেইনারে রপ্তানি করা হয়। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ নানা শিল্পপণ্য লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) কার্গো স্থানান্তর করে পরিবহন করা হয়।
এ দুই ধরনের প্রক্রিয়ায় আমদানিকৃত পণ্য খালাস হয়। প্রতিদিন গড়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় তিন হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়। আর বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার সক্ষমতা আছে ৫৩ হাজার ৫১৮টিইইউএস। যার বিপরীতে গতকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত বন্দরের কনটেইনার ছিল ৩১ হাজার ১৭৪ টিইইউএস। কিন্তু স্বাধীনতা দিবস, সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং ঈদের আগে ও পরে মোট ৫ দিন ছুটিসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১১-১২ দিনের টানা বন্ধ পাচ্ছে দেশবাসী। এ বন্ধে দেশের সকল আমদানি ও রপ্তানি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। এছাড়া বর্তমানে বন্দরের কনটেইনার খালাসের অপেক্ষায় থাকা ১৫টির মতো কনটেইনার জাহাজ অলস বসে আছে। এসব জাহাজে ৪০ হাজারের বেশি কনটেইনার আছে। আপাতত কনটেইনার নামানোর কাজ বন্ধ আছে।
ফলে বন্দর থেকে সময়মতো আমদানি কনটেইনারবাহী পণ্য খালাস স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম কনটেইনার খালাস হবে। এ বন্ধের সময়ে গড়ে চার হাজার করে কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো হলে সেই হিসাবে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের স্তূপ জমবে। আশঙ্কা করা যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার রাখার সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানিকৃত কার্গো বোঝাই জাহাজ আছে ৩৩টি। এর মধ্যে ২২টি বড় জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ নানা শিল্পপণ্য লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) কার্গো স্থানান্তর করা হচ্ছে। বাকি ১১টি জাহাজ থেকে কোনো পণ্য খালাস করা হচ্ছে না। এছাড়া আরও ১০টি তেলবাহী জাহাজ থেকে তেল খালাস বন্ধ হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের টানা বন্ধের সময় সাময়িক কিছুটা প্রভাব পড়লেও দীর্ঘসময়ে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ ঈদেও দিন শুধুমাত্র বন্ধ থাকবে। এছাড়া আমাদের জাহাজ, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অনেক সক্ষমতা আছে। গত কয়েক বছরের নতুন নতুন ইয়ার্ড সম্প্রসারণ, আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংযোজন, আগের চেয়ে বেশি ড্রাফটের জাহাজ আগমণ, দ্রুত ডেলিভারি কার্যক্রমের কারণে জাহাজগুলো অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস করে বন্দর ত্যাগ করতে পারছে। ফলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত কনটেইনার হ্যান্ডলিং ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টিইইউএস, কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ মেট্রিক টন; যা বন্দরের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ হ্যান্ডলিং রেকর্ড।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, ঈদের টানার বন্ধের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারের সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি কারখানা বন্ধ থাকায় কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। এতে সাময়িক চাপ দেখা দেবে। চলতি বছরের শুরুতে দেশের ব্যাংকিং খাতের ডলার সংকটে এলসি খোলা কঠিন ছিল। যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ছিল। তখন চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে কম ছিল। তবে বর্তমানে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলারের জোগান বাড়ায় আমদানি ও রপ্তানি দুটিই বেড়েছে। এতে কনটেইনার ও পণ্যের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী বছর আরও কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বাড়বে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিভিস করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অপরদিকে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার শেয়ার বিজেকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের আমদানি ও রপ্তানি দুটোই সেøা আছে। আর শুধু ঈদের দিনে বেসরকারি ডিপোগুলোতে বন্ধ থাকবে। সুুতরাং বেসরকারি ডিপোতে কনটেইনার জট হওয়ার সুযোগ নেই। আর আমাদের সক্ষমতার ৫০ শতাংশ খালি আছে।