Print Date & Time : 7 September 2025 Sunday 1:34 pm

ঈদ আনন্দে বাড়ি ফেরা হোক নিরাপদে

ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে নগরবাসী মানুষ এখন গ্রামমুখী। নাড়ির টানে মুক্তির ছোঁয়াই এ যেন এক আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে সবাই। নানা ধরনের কর্মব্যস্ততা ও উন্নত জীবন ধারার জন্য গ্রামের মানুষ শহরে বসবাস করলেও ঈদে সবারই থাকে বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়া। ঈদে নগরবাসীর গ্রামমুখী হওয়ার সামাজিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

গ্রামে ফিরতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় নগরবাসী মানুষদের। টিকিট ভোগান্তি, টিকিট পেলেও কয়েকগুণ বেশি দাম, যানজটসহ নানা ধরনের সমস্যাই পড়তে হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) হিসাবে, রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এ জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি দুই ঈদে গ্রামে যান। এত মানুষের একসঙ্গে ঘরে ফেরার জন্য প্রয়োজন নিরাপদ সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা। প্রতিবছরই ঈদে নগরবাসী মানুষের বাড়ি ফেরার সময় পড়তে হয় নানা রকম ভোগান্তিতে। অনেকের তো বাড়িই ফেরা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত যানযটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতেই থাকে। ২০১৭ সালে ঈদযাত্রায় সড়ক, নৌ ও রেলপথে নিহত হয় ৩০১ জন। ২০১৮ সালে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০৫ জনে। এর মধ্যে সড়কপথে নিহত হয়েছিল ৩৩৯ জন। নৌপথে ২৫ জন এবং রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়েছিল। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে সড?ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ছয় হাজার ৬৮৬ জন! ২০২১ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন।

ঈদে সাধারণত সবাই গ্রামে ফিরে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে চাই পরিবার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে তাই রাস্তাঘাটে স্বাভাবিকভাবেই লোকসমাগম বেশি থাকে। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা শুরু করে বাস মালিকরা। লোকসমাগম যেহেতু বেশি থাকে তাই অতিরিক্ত যানবাহন ও দরকার হয়। তাই বেশি লাভের আশায় ফিটনেসবিহীন বাস রাস্তায় নামাই এবং চালকেরা বেশিরভাগ সময়ই প্রশিক্ষণ ছাড়াই বাস চালায়। একাধারে গাড়ি চালানোর কারণে চালকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বিকল্প চালক না থাকায় ক্লান্ত শরীর নিয়েই বারবার গাড়ি চালাতে হয়, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। আরেকটি সমস্যা হলো বাড়তি ভাড়ার নামে টিকিট কাউন্টারগুলোতে চলে চাঁদাবাজি ফলে নি¤œ আয়ের মানুষ টিকিট ক্রয় করতে পারে না এবং অনেক সময় তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালবাহি ট্রাকে, ট্রেনের ছাদে বাড়ি ফেরে। যার ফলে ঘটতে পারে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা তো এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই এসব মানুষের নিরাপদে বাড়ি ফিরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি। সেই সঙ্গে ঈদকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের নিরপত্তার কথা চিন্তা করে নিয়মমাফিক অতিরিক্ত পরিবহন সেবা চালু করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের জন্য নিয়মিত রাস্তাঘাট মেরামতসহ গতিবিধি মেনে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করতে পারলে অনেকাংশেই দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে। গতিবিধি না মেনে গাড়ি চালালে তার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে।

ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সব স্তরের মানুষের মাঝে, ঈদে বাড়ি ফেরার যাত্রা হোক নিরাপদে।

সিরাজুম মনিরা

শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ