Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 9:39 am

ঈদ আর পহেলা বৈশাখ ঘিরে সরব জামদানি পল্লি

আবদুর রহিম, নারায়ণগঞ্জ: পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা জামদানি পল্লির কারিগররা। তিন শতাধিক তাঁতি আর কারিগর তৈরি করছেন শাড়ি, পাঞ্জাবি আর সালোয়ার-কামিজ। এখানে বিভিন্ন দামের জামদানি শাড়ি পাওয়া যায়। ফলে চাহিদা অনুযায়ী জামদানি সংগ্রহ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতারা। শুধু জামদানিই নয়, এ পল্লিতে পাঞ্জাবি ও সালোয়ার-কামিজ তৈরি হচ্ছে। তবে দেশীয় এ শিল্পের প্রসারে আরও প্রচারণা দরকারÑএমন দাবি জামদানি সংশ্লিষ্টদের।

কয়েকজন কারিগর জানিয়েছেন, সুরমাদানীর মদনপাইর, করলাপাইর, পাটিতর, ঝুপ্পাপাইর তারাফুল, জামবুড়াসহ বাহারি রঙের জামদানি শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত তারা। তৈরি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা মূল্যের জামদানি শাড়িও। এবার রোজার শুরু থেকেই বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। ভালো চাহিদা থাকায় বিগত সময়ের মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।

তারা আরও জানিয়েছেন, ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে রাতদিন কাজ করছেন তারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসছে। তাই এখানকার জামদানির মান ঠিক রাখতে রাতদিন খেটে যাচ্ছেন। আর নানা ডিজাইনের শাড়ির পসরা সাজিয়েছেন তাঁতিরা। ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি কিনছেন। জামদানির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার নোয়াপাড়া গ্রাম। কিন্তু এ নিয়ে তেমন প্রচারণা নেই।

অপরদিকে, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে ভারতীয় ও কম দামি নকল জামদানি ছড়িয়ে পড়ায় আসল জামদানির বিকিকিনি অনেকটাই কমেছে। এজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তারা।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় বরাবর সোনারগাঁও-রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার অঞ্চল ছিল এ কাপড় তৈরির প্রাণকেন্দ্র। বর্তমানে রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া, রূপসী, সøুইসগেট, গঙ্গানগর, বরাবো, পবনকুল, মৈকুলী, খাদুন ও পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁও এবং সিদ্ধিরগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় এই শিল্প বিদ্যমান। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও জামদানি তাঁতশিল্প রয়েছে। জামদানি কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত এক ধরনের সূক্ষ্ম বস্ত্র। প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের আধুনিক সংস্করণ হিসেবে জামদানি বেশ জনপ্রিয়। কাপড়ের ওপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। আবার সুতি সুতার সঙ্গে সিল্ক সুতার সমন্বয়েও তৈরি করা হয় জামদানি কাপড়। জামদানি বলতে সাধারণত শাড়িকেই বোঝানো হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশি ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, ফতুয়া, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতি তৈরি করা হয় বলে জানান তাঁতিরা।

তাঁতিদের মতে, বিসিকের কাছ থেকে পট ছাড়া কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। বিসিক, নোয়াপাড়া জামদানি পল্লির হাটে বৃষ্টির সময় পানি পড়ে, বাতাস ও বৃষ্টি হলে দোকান গুটিয়ে বসে থাকতে হয়।

নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জের জামদানি বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা বায়েজিদ হোসেন জানান, একসময় সমাজের বিত্তবানরা তাঁতের শাড়ি ব্যবহার করলেও এখন সব শ্রেণির মানুষ তাঁতের শাড়ির প্রতি ঝুঁকছে। শাড়ির মূল্য হাতের নাগালে চলে আসায় এটা এখন আর বিত্তবানদের পণ্য নয়। প্রচার না থাকায় অনেক ক্রেতা জানেন না জামদানি কোথায় তৈরি হয়।

২০১৩ সালে ইউনেস্কো জামদানি বয়নশিল্পকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেয়। দেশ-বিদেশে জামদানি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জের জামদানি জিআই পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করে।