ঈদ উদ্যাপন প্রস্তুতি পর্ব স্বস্তিকর হোক

পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে দেশে উদ্যাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিম উম্মাহর দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতর একটি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কারের প্রত্যাশায় এই ঈদ অনেক বেশি মহিমান্বিত ও আনন্দঘন। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি জাকাত ও ফিতরা আদায় শেষে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত হয়ে অনাবিল আনন্দ লাভ এই ঈদের বিশেষ সওগাত। 

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করা আমাদের দেশে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সারাবছর দেখা না হলেও অন্তত ঈদ উপলক্ষে অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটানো যায়, এক পারিবারিক ও সামাজিক মেলবন্ধনের সৃষ্টি হয়। এ এক অপূর্ব সম্মিলনের সময়। অন্য যেকোনো আনন্দ-উৎসব ও ঈদের আনন্দ-উৎসবের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কেবল আনন্দ-উৎসব নয়, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ, ক্ষমা ও সন্তুষ্টিলাভ এবং মানবকল্যাণের সুযোগ রয়েছে এর মধ্যে। ঈদ আমাদের দেশে বরাবরই ব্যাপক আয়োজন, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়। আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সব মানুষই তাদের সাধ্যানুযায়ী ঈদ-উৎসবে অংশ নেন।

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় পাঁচটি মার্কেটে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ১৭ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২২টি স্থানে আগুন লেগেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। নিশ্চয়ই তারা এবং তাদের কর্মচারী ও পরিবারের জন্য স্বতঃস্ফূর্ততায় ঈদ উদ্যাপন কঠিন হয়ে পড়বে। তাদের জন্য আমাদের সমবেদনা।

ঈদে কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে এবং কর্মস্থলে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির খবর আমাদের বিচলিত করে। এতে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ার ঘটনাও কম নয়। আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কর্মস্থল থেকে বাড়ির উদ্দেশে ছুটবেন চাকরিজীবী কর্মজীবী মানুষ। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা, অতিরিক্ত ভাড়া, যানজট ও চাঁদাবাজির কারণে তাদের যেন বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল হতে হবে।

প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর ও কর্মস্থল থেকে গ্রামে আপন ঠিকানায় ফেরে। এ সময় সড়ক-মহাসড়কে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। মাইলের পর মাইল যানজটে পড়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিপুলসংখ্যক মানুষকে ঘরে পৌঁছে দেয়া এক বিশাল কর্মযজ্ঞ, সহজ কোনো কাজ নয়। ঈদের এ সময় ছিনতাইকারীসহ অন্য অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেক মানুষ বাসাবাড়ি ছেড়ে ঈদ করতে যায়। ফলে এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিক সতর্ক থাকা আবশ্যক। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের মধ্যে ইসলামের অহিংসা, ক্ষমা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা জাগরিত হোক। প্রত্যেকের ঈদ উদ্যাপন প্রস্তুতি পর্ব স্বস্তিকর হোক, এই প্রত্যাশা।