ঈদ কেনাকাটায় জনপ্রিয় রাজধানীর পাঁচ মার্কেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদ হোক বা পার্বণ, উৎসব হোক বা সাধারণ সময় মানুষ কেনাকাটার জন্য শপিংমলে যাতায়াত তরুণ প্রজন্মের। আবার সিনেমা দেখা, ছুটির দিনে সময় কাটানো বা খাওয়া-দাওয়ার জন্য রাজধানীবাসীর কাছে শপিংমলগুলোই এখন অন্যতম গন্তব্য। এমনকি রোজায় ইফতারের আয়োজন বা বন্ধুদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠছে রাজধানীর কয়েকটি শপিংমল। আর এসব ক্ষেত্রে রাজধানীবাসীর প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে নতুন প্রজম্মের অত্যাধুনিক শপিংমল বসুন্ধরা সিটি ও যমুনা ফিউচার পার্ক। অন্যদিকে বেশিরভাগ পুরোনো মার্কেট ব্যবসা হারালেও বেচাকেনায় নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চক।
রাজধানীজুড়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় নতুন-নতুন মার্কেট গড়ে উঠলেও এখনও কেনাকাটায় শীর্ষে রাজধানীর পাঁচটি মার্কেট। অত্যাধুনিক এসব মার্কেটগুলোতে সব ধরনের পণ্য সংগ্রহের সুবিধা থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন খাবারের দোকান ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকায় বর্তমান প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের কাছে পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেটেরও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
গত চার-পাঁচ বছরে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন অনেক মার্কেট গড়ে উঠেছে। মার্কেট বাড়ার পাশাপাশি অনলাইন ব্যবসা চালু হওয়ায় পুরোনো মার্কেটগুলোতে বিক্রি কমে যাচ্ছে। রাজধানীতে গুটি কয়েকটি মার্কেট বাদে বেশিরভাগ মার্কেটে ব্যবসা নেই। যে মার্কেটগুলোতে ভালো বিক্রি হয় তার মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক। সারা বছরই এসব মার্কেটে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ধুম লেগেই থাকে। আর ঈদ উৎসবে তো পা ফেলার মতোই জায়গা থাকে না।
রাজধানীর মার্কেট সমিতিগুলোর তথ্যমতে, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট বিভিন্ন উৎসব ছাড়া বাকি সময় বসে থাকলেও মোটামুটি সব সময় কেনাকাটা হয় গাউছিয়া, চাঁদনী চক ও নিউমার্কেটে। বিভিন্ন উৎসবে এসব মার্কেটে কেনাকাটা আরও বেড়ে যায়। এরই ধারাবাহিকায় এ বছরও রোজার ঈদের শুরু থেকেই জমে উঠেছে গাউছিয়া, চাঁদনী চক ও নিউমার্কেটে ঈদের কেনাকাটা।
গত তিন-চার বছর থেকে রোজার ঈদে মার্কেটগুলোতে চাঁদরাত পর্যন্ত কেনাকাটা হয় প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত। ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর প্রায় ৩৫ শতাংশ কেনাকাটা হয় নিউমার্কেট এলাকায়। মার্কেটগুলো নারী-শিশুদের বিখ্যাত হওয়ার পাশাপাশি ওই এলকার কয়েকটি মার্কেট কাছাকাছি হওয়ার বছরজুড়ে লক্ষণীয় ক্রেতাদের লেগে থাকে। রাজধানীর প্রায় সব এলাকার ক্রেতারাই এখানে কেনাকাটা করে থাকেন।
বাজার বিশ্লেষকরা জানায়, ‘নতুন মার্কেটগুলোর মধ্যে বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্ক বাদে বাকি যে নতুন মার্কেটগুলো গড়ে উঠেছে সেগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো না। যমুনা ও বসুন্ধরাতে বিনোদনসহ সব ধরনের পণ্যর ক্রয়ের সুবিধা থাকায় নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তবে পুরোনো মার্কেটগুলোর মধ্যে এখন সর্বাধিক জনপ্রিয়তার জায়গা ধরে রেখেছে নিউমার্কেট এলাকার মার্কেটগুলো।
গাউছিয়া দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ে নতুন মার্কেটগুলোতে ব্যবসা জমানো অনেক কঠিন। এখন সময় বদলে গেছে বিভিন্ন অনলাইনের পাশাপাশি মফস্বল এলাকায় মার্কেট গড়ে ওঠাই গুটি কয়েকটি মার্কেট বাদে বেশিরভাগ মার্কেটের কেনাবেচা নেই। পুরোনো মার্কেটগুলোর মধ্যে গাউছিয়া, চাঁদনীচক, নিউমার্কেট ও বঙ্গমার্কেটে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি পাইকারি বিক্রি হওয়াই এ মার্কেটগুলোত এখনও জৌলুস ধরে রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মার্কেট থেকে অনলাইন ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন ধরনের পোশাক সংগ্রহ করে। এছাড়ার রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মার্কেট ছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে দোকানিয়া এসে গাউছিয়া, চাঁদনীচক, নিউমার্কেট ও বঙ্গমার্কেটে থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাইকারি সংগ্রহ করে। মূলত পাইকারি ও খুচরার পাশাপাশি নারী-পুরুষ ও শিশুদের সব ধরনের পোশাকের সমারহ থাকায় এসব গাউছিয়া, চাঁদনীচক, নিউমার্কেট ও বঙ্গমার্কেট মানুষের কাছে জনপ্রিয়।’
রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ঈদ শপিং করতে গাউছিয়া মার্কেটে এসেছেন সুরাইয়া ও মারুফা হায়দার। তারা বললেন, এখানে এসেছি গজ কাপড় কিনতে। দামে একটু বেশি হলেও এখানে দরদাম করে কেনা যায় এবং এখানে অনেক ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। তাছাড়া বাসায় ছোট ভাইবোন ও বাবা-মায়ের জন্য পাশের নিউমার্কেট থেকেও কেনাকাটা করব। তাছাড়া থ্রিপিসের জন্য চাঁদনীচকের তুলনা হয় না। সব ধরনের থ্রিপিচ সাধারণত চাঁদনীচকে পাওয়া যায়।
বিক্রেতারা জানান, এ বছরও বেক্সিভয়েলের দাম গজপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়ানো হলেও গরমের কারণে বিদেশি কাপড়ের পাশাপাশি এসব দেশি ভয়েলের কাপড়ও ক্রেতারা আগ্রহ করেই কিনছেন। বাজার ঘুরে দেখা যায় সুতি কাপড় নকশা ভেদে কেনা যাচ্ছে গজপ্রতি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়, জর্জেট ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়, শিফন ও মসলিন ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। ওড়নার দোকানেও বেশ ভিড়। ক্রেতারা সেলাই ছাড়া কাপড়ের পাশাপাশি ম্যাচিং করে ওড়না কিনছেন।