ঈদ ছুটিতে কনটেইনার জটের আশঙ্কা বন্দরে

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : একদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ চার দফা দাবিতে পূর্ণাঙ্গ কলম বিরতিতে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, এতে স্থবির হয়ে পড়েছে শুল্কায়ন কার্যক্রম। অন্যদিকে সপ্তাহখানেক পর ঈদের ১০ দিন ছুটির শুরু হবে। এ সময়ে দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়বে। ফলে এ সময়ে বন্দরে ইয়ার্ডে কনটেইনার স্তূপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ ভাগ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এর প্রায় পুরোটা শুল্কায়ন হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। কিন্তু এনবিআর ভেঙে আলাদা দুটি বিভাগ চালুর প্রতিবাদে গত সপ্তাহব্যাপী কলম বিরতিতে কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা। চলতি সপ্তাহে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দাবিতে এনবিআর ও এনবিআরের অধীনস্থ সব ভ্যাট, কাস্টমস ও কর অফিসে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলছে। সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এই কলম বিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজস্ব কার্যক্রম। একসঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি ব্যাহত শুল্কায়ন কার্যক্রম। এর প্রভাব পড়েছে পণ্য খালাসেও। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস নিতে না পারায় আমদানিকারকদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। বন্দরের পরিবহন শাখার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গতকাল সকালে বন্দর ইয়ার্ডে মোট কনটেইনার জমা ছিল ৪১ হাজার ৩১৪ টিইইউএস কনটেইনার। যা গত ১০ মে সকালে ছিল ৩৬ হাজার ৭৯ টিইইউএস কনটেইনার। এ সময়ে প্রাইম মুভার শ্রমিকদের আন্দোলন এবং এনবিআরের কর্মকর্তাদের কলম বিরতির কারণে ১৪ দিনে ৫ হাজার ২৩৫ টিইইউএস কনটেইনার বেড়েছে। যা বন্দর স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। যদি আরও বেশি কনটেইনার জমেছিল।

আমদানিকারকরা বলছেন, খাদ্যপণ্য ও শিল্পপণ্য সময়মতো খালাস না হওয়ায় বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ছে। এছাড়া রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমারও শঙ্কা করা হচ্ছে। এ দিকে শুল্ক কর্মকর্তাদের পুরোপুরি কলম বিরতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে তৈরি হচ্ছে পণ্যজট। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন বেলা ৩টা পর কাজ হলেও এখন পুরোপুরি বন্ধ। পাশাপাশি শুল্কায়নে দীর্ঘসূত্রিতায় পণ্যের ওপর মাসুলও বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাজস্ব আদায়ে বিরূপ প্রভাবে শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন আমদানি-রপ্তানিকারক বলেন, ‘কেউ কোনো কাজ করতে পারছে না। ওখানে গিয়ে দেখা যায় পণ্যের শুল্কায়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। পোর্টে যে ডেমারেজ আসছে এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের, এই টাকা সিএনএফও দেবে না কাষ্টমসও দেবে না। এটা দেবে এক্সপোর্টার এবং ইমপোর্টার। তাহলে লাভটা কার হচ্ছে। সবাই তো ক্ষতি হচ্ছে।’
কাস্টমস হাউজের দায়িত্বশীলরা বলেন, ‘গত ১০ মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ দিয়েই রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। তবে কলম বিরতির প্রভাবে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রভাবে রাজস্ব ঘাটতি বাড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।’

চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন বাবলু বলেন, ‘বন্দরের ডেমারেজ চার্জ এখন ৪ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যেকটা পণ্যের ওপর এই ডেমারেজ চার্জ কনভার্ট করে, যে আমদানি করে সে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। অতএব পণ্যের মূল্য বাড়বে। আমদানি খরচও বাড়বে। তাই তাড়াতাড়ি এ সংকটের সমাধান হওয়া উচিত।’
বন্দরের কর্মকর্তারা বলেন, ‘গত সপ্তাহে তো দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা কর্মবিরতির পর বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলছে শুল্কায়ন কার্যক্রম। এতে পণ্য খালাস কম হওয়ায় হয়েছে। এখন তো শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ। এতে বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজ জট তৈরি হতে পারে।’

সার্বিক বিষয়ে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনে কনটেইনার ডেলিভারি কম হচ্ছে। এছাড়া কিছু ডিপোতে ঝামেলা হওয়ার কারণে কনটেইনার মুভকম কম হচ্ছে। ঈদের ছুটির আগে সব দিন কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কনটেইনার ডেলিভারি বাড়ে সেই জন্য তাগাদা দিচ্ছি। তাহলে তো কনটেইনার জট সৃষ্টি হবে।

অপরদিকে এনবিআরের আন্দোলনকারী একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দাবিতে এনবিআর ও এনবিআরের অধীনস্থ সব ভ্যাট, কাস্টমস ও কর অফিসে পূর্ণাঙ্গ
কর্মবিরতি চলছে। সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এ সময়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ আছে।