অর্থনীতিতে দুটি বিষয়কে পাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এর একটি হচ্ছে বেকারত্ব, অন্যটি মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশে দুটিরই বেশ প্রকটতা বিদ্যমান। তবে বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে। গত অক্টোবরে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই মূল্যস্ফীতি চলতি অর্থবছরে সরকারের প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কাজেই নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৯৩%’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা যায়, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের তুলনায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির পরিমাণ অনেক বেশি। অথচ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হচ্ছে, দেশে কোনো ধরনের খাদ্যপণ্যের ঘাটতি নেই। কোনো ঘাটতি না থাকা সত্তে¡ও বাজারে পণ্যের দাম কেন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে, সে বিষয়টি কারোরই বোধগম্য হচ্ছে না।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে যে নানা ধরনের সংকট বিরাজমান, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহলের কোনো দ্বিমত করার সুযোগ নেই। সরকারের বাজেট বাস্তবায়নেও অর্থের সংকট রয়েছে। অর্থের সংকট মোকাবিলায় গত অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপিয়ে সরকারকে দিয়েছিল। বাজারে তারল্য বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে এক ধরনের টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে চলত অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়ার নীতি থেকে সরে এসেছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা অনেক আগে থেকেই নতুন টাকা ছাপানোর নীতি থেকে সরে আসতে বলেছিলেন। তবে অর্থনীতিতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলে তার ফলাফল পেতে অন্তত ১৮০ দিন সময় লাগে। কাজেই এখন যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সেগুলোর ফল পেতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্ন এসে যায় যে, ততদিন কি তাহলে মূল্যস্ফীতি বাড়তেই থাকবে? এর সঠিক উত্তর কারও জানা নেই। তবে যে উত্তর সবার জানা আছে তা হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে অনেক বেশি আন্তরিক হতে হবে। বিশেষ করে বাজার ব্যবস্থায় মনিটরিং জোরদার করতে হবে। যেসব নিত্যপণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়, সেগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকার বিপণন সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এতে বাজারে ভারসাম্য ফিরে আসবে। কেবল সিন্ডিকেটের ওপর দায় চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সরকারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। কাজেই জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।