উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চা

বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। বাংলাদেশে ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তচাপ বেশি। স্ট্রোক, হƒদ্রোগ ও কিডনি বিকল হওয়ার মতো রোগের পেছনে অন্যতম কারণ এই উচ্চ রক্তচাপ। একে বলা হয় নীরব ঘাতক। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শরীরচর্চা করলে হƒৎস্পন্দন বৃদ্ধি পায় এবং ফুসফুস চাঙা থাকে। এর ফলে মাংসপেশিতে নিয়মিত রক্ত পরিবাহিত হয়। রক্তজালিকা প্রসারিত হওয়ার ফলে কোষে কোষে রক্ত সহজেই অক্সিজেন বহন করতে পারে। এতে হƒৎপেশি শক্তিশালী ও রক্তসঞ্চালন সহজতর হয় এবং রক্তনালির ওপর কম চাপ পড়ে। গবেষণা বলছে, শরীরচর্চার ফলে সিস্টোলিক রক্তচাপ ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমে। শরীরচর্চায় শুধু রক্তচাপই কমে না, ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। ফলে রক্তনালির গায়ে চর্বি জমার সুযোগ কমে যায় এবং হƒদ্রোগের ঝুঁকিও কমে।

শরীরচর্চার ধরন ও মাত্রা: হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, সাঁতার কাটাÑএসব হলো এরোবিক শরীরচর্চা। এর অর্থ হলো অক্সিজেন সহযোগে শরীরচর্চা। এতে হƒৎস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস একটা নির্ধারিত লয়ে বাড়তে থাকে। এনোরোবিক শরীরচর্চার আরেকটি ধরন। এতে হঠাৎ করে শরীরে শক্তির প্রয়োজন পড়ে। খুব দ্রুততার সঙ্গে দৌড়ানো, ভারী ওজন উত্তোলনÑএগুলো এনোরোবিক শরীরচর্চা। এটি সবার জন্য উপযোগী নয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কিংবা হƒৎপিণ্ডের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন এরোবিক শরীরচর্চা। এর মাঝে হাঁটা হলো সর্বোত্তম। মাত্রা হবে মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রা (ঘাম ঝরিয়ে জোর কদমে হাঁটতে হবে)।

আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির সুপারিশ হলো ৪০ মিনিট মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রার শরীরচর্চা। যদি একাধারে ৪০ মিনিট শরীরচর্চা করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়, তবে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের তিন থেকে চারটি সেশনে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

নিজেকে সক্রিয় রাখতে পারলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজসাধ্য হয়। শরীরচর্চার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।

লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা ভালো। অনেকেই দু-তিনতলায় ওঠার জন্য দীর্ঘ সময় লিফটের জন্য করিডরে অপেক্ষমাণ থাকেন। এই অপেক্ষা না করে ক্যালরি খরচ করুন। এতে শরীর ভালো থাকবে। গাড়ি ছেড়ে একটু দূরে নেমে হাঁটতে পারেন। বাড়ির টুকটাক কাজে সহযোগিতা করতে পারেন। প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটা সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক। কত কদম হাঁটছেনÑমুঠোফোন অ্যাপ ব্যবহার করে এই হিসাব রাখা যায়।

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল