নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, উজবেকিস্তান বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে তাসখন্দ সফর করেছিলেন। উভয় দেশের মানুষের মধ্যে সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। উজবেকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ঢাকায় উজবেকিস্তানের একটি দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাধা দূর করার জন্য চলতি বছরের মধ্যে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে।
গতকাল ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মধ্যে ‘থার্ড ইন্টারগভার্মেন্টাল কমিশন মিটিং অন ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড উজবেকিস্তান’ বিষয়ক সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ সহজ করতে উভয় দেশের মধ্যে আকাশ পথ চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায়, এ বিষয়ে আমরা ভালো কিছু করতে পারব। তখন মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে উজবেকিস্তান যাওয়া যাবে। এখন অনেক ঘুরে প্রায় ১২ ঘণ্টা জার্নি করে সেখানে যেতে হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে উজবেকিস্তান বরাবরই বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছে, আগামীতের এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। ডবল টেক্সেশন পদ্ধতি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। এ বিষয়ে উজবেকিস্তান সরকার পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আশা করা যায়, এ সমস্যারও সমাধান হবে।
তিনি বলেন, উজবেকিস্তান থেকে সার আমদানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উজবেকিস্তান বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে। চলতি বছরের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাধা দূর করার জন্য একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে চলমান সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। আগামী বছর উজবেকিস্তানে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, সভায় সাতটি বিষয়ের ওপর আলোচনা করা হয়, এগুলো হলোÑউভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিষয়, টেক্সটাইল এবং কটন সেক্টর, এগ্রো ফুড এন্ড ফ্রুইটস সেক্টর, ফার্মাসিউটিকেল সেক্টর, মিউচ্যুয়াল ট্রেড বেরিযার রিমুভ, মিউচুয়াল অ্যাট্রাকশন অফ ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট এবং ট্রান্সপোর্ট সেক্টরে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
সভা শেষে একটি জয়েন্ট স্টেটমেন্ট ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, আলোচ্য বিষয়গুলোর ওপর উভয় পক্ষের মধ্যে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করা হয়েছে। উভয় দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিতে উভয় দেশ একমত পোষণ করে। এজন্য যেসব ট্রেড বেরিয়ার রয়েছে সেগুলো দূর করতে উভয় দেশের সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সভায় বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সক্ষমতা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধসহ রপ্তানি পণ্য আমদানি করার জন্য উজবেকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়া মেডিকেল পণ্য রপ্তানির বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয়া হয়। উজবেকিস্তান টেকনোলজি ট্রান্সফার, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, টেক্সটাইল সেক্টরে ট্রেইনিং একটিভিটিজ’র জন্য প্রস্তাব দেয়। উভয় দেশ এগুলো বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে। ঢাকায় উজবেকিস্তানের একটি দূতাবাস স্থাপন এবং আকাশ পথে যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে উভয় পক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করে। মিটিং শেষে উভয় দেশের মধ্যে এ তৃতীয় সভায় কার্যবিবরণী স্বাক্ষর করা হয়।
বৈঠকে উজবেকিস্তনের উপ-প্রধানমন্ত্রী জামশেদ কাদজায়েভের নেতৃত্বে ২২ প্রতিনিধি দলে ছিলেন ট্রান্সপোর্ট মিনিস্টার ইখম মাকামোভ, ফার্স্ট ডেপুটি মিনিস্টার অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ট্রেড লাজিজ কদরাতোভ, ডেপুটি মিনিস্টার অব এগ্রিকালচার আলিসার সুকোরোভ, ডেপুটি মিনিস্টার অব ট্রান্সপোর্ট জাসুরবেক ছোরিভসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, কৃষি মন্ত্রণাালয়ের সচিব মো. সাঈদুল ইসলাম, উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) নুসরাত জাবিন বানু, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি-২) মো. আব্দুর রহিম খান।