উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে ৫২%

ইসমাইল আলী: রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল, যদিও তা কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। সেজন্য মতিঝিল-কমলাপুর অংশের সমীক্ষাশেষে ডিজাইন চলছে। তবে করোনার কারণে পিছিয়ে গেছে মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ। এতে দেড় বছর বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পটির মেয়াদ। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়েছে। সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৫২ শতাংশ।

সূত্র জানায়, গত মাসে মেট্রোরেলের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর ৭ ডিসেম্বর তা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। গতকাল প্রকল্পটির পিআইসি (প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যয় বৃদ্ধির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

সভার তথ্যমতে, উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল তথা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-৬ (এমআরটি-৬) নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালের জুলাইয়ে অনুমোদন করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি সাত লাখ টাকা। তবে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মেট্রোরেলের নির্মাণব্যয় বাড়ছে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

এমআরটি-৬ নির্মাণে প্রাথমিকভাবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ দেয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারের দেয়ার কথা পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে সংশোধিত হিসাবে জাইকা ঋণ দেবে ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আর সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হবে ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

এদিকে চলতি বছর ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশটি উদ্বোধনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করা হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর। তবে মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণ ও নির্মাণ-পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণসহ সব মিলিয়ে প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর। বর্তমানে তা ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে।

সভায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির বেশকিছু কারণ ও খাত তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ পরামর্শক খাতে ৫৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্টের (টিওডি) পরামর্শক খাতে ব্যয় বাড়ছে ১৩৫ কোটি টাকা। এছাড়া সিডি-ভ্যাট খাতে অতিরিক্ত লাগবে ৮৬২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। মূলত সরকারিভাবে করহার ১৩ দশমিক ৪২ থেকে বাড়িয়ে ১৬ শতাংশ করায় এ ব্যয় বাড়ছে। আর প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে ব্যয় বাড়ছে ১১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

এদিকে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এক দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করতে গিয়ে পূর্ত কাজে ৭১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, বৈদ্যুতিক ও মেকানিক্যাল ব্যবস্থা (ই অ্যান্ড এম) স্থাপনে ৩২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং রোলিং স্টক (ইঞ্জিন-কোচ) খাতে ৫০ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়বে। অর্থাৎ বর্ধিত অংশের জন্য ব্যয় বাড়ছে মোট এক হাজার ৮৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির রাজস্ব খাতের ব্যয়ের মধ্যে মেট্রোরেলের ট্রায়াল রানে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল খাতে ২০০ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা খাতে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, অফিস ভাড়া খাতে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা, সভা-সেমিনার আয়োজনে এক কোটি ১০ লাখ টাকা, বিটিআরসির লাইসেন্স ফি বাবদ এক কোটি টাকা, পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ১০ কোটি টাকা, মেট্রোরেল পরিচালনায় প্রশিক্ষণ খাতে পাঁচ কোটি টাকা ও ডিজিটাল আর্কাইভ খাতে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ছে।

প্রকল্পটির নির্মাণ খাতের মধ্যে স্টেশন প্লাজা নির্মাণে ৯২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ই অ্যান্ড এম স্থাপনে (প্যাকেজ-০৭) দুই হাজার ২৫৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা, রোলিং স্টক (সিপি-০৮) কেনায় ৮৫১ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং টিওডি (উন্নতমানের ফুটপাত, পার্কিং, বাস স্টপেজ, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ইত্যাদি) খাতে ৮৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ছে।

এর বাইরে প্রকল্পের জন্য রাজউকের শূন্য দশমিক ৪৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ১৩০ কোটি টাকা, স্টেশন প্লাজার জন্য ছয় দশমিক ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে তিন হাজার ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং মতিঝিল-কমলাপুর অংশের জন্য দুই দশমিক ৪০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে এক হাজার ১৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় হবে। আর সরকার কর্তৃক জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের হার বাড়ানোয় বিভিন্ন মৌজায় ৪৫৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে জমি অধিগ্রহণ খাতে অতিরিক্ত লাগবে পাঁচ হাজার ৩৬৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

এদিকে উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোর ভূমি উন্নয়নে (সিপি-০১) ৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। একইভাবে আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার অংশ (সিপি-০৫) নির্মাণে সাশ্রয় হচ্ছে ৬৯১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এতে দুই প্যাকেজে ৭৬০ কোটি ৬৩ লাখ ব্যয় হ্রাস করা হবে। সব মিলিয়ে এমআরটি-৬ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে প্রায় ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা।