ইসমাইল আলী: দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে হলো ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, যা উদ্বোধন করা হয়েছে গত বছর ১২ মার্চ। এরপর ২১ মাস পেরিয়ে গেছে। তবে শেষ হয়নি এর বিভিন্ন অংশের নির্মাণকাজ। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে নতুন আরও কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। এজন্য প্রকল্পটি সংশোধন করতে হবে। এতে বাড়তে যাচ্ছে প্রকল্পটির নির্মাণব্যয়।
তথ্যমতে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রথম প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ছয় হাজার ৮৯২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেয়া হয় দ্বিতীয় প্রকল্প, যা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।
দ্বিতীয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে আরও কিছু বিষয় নতুনভাবে যুক্ত হয়। এতে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়াচ্ছে চার হাজার ১৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর দুই প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ৪৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ২০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যদিও প্রাথমিকভাবে এ ব্যয় ছিল ১১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
সূত্রমতে, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগে প্রকল্পটির পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। এতে জানানো হয়, প্রকল্পটিতে বেশকিছু কাজ নতুনভাবে সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়। এজন্য ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধন করা প্রয়োজন। নতুন সংযোজিত অংশগুলো হলোÑমাওয়া গোলচত্বর পুনঃডিজাইন ও নির্মাণ, পাঁচ্চর গোলচত্বর পুনঃডিজাইন ও নির্মাণ, নতুনভাবে সংযোজিত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, স্মৃতিফলক নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতুগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির সংশোধিত ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জানানো হয়, উপরি-উল্লিখিত নতুন অঙ্গগুলো বাস্তবায়নে বাড়তি অর্থ প্রয়োজন। এসব খাতে ৩৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে। তাই ডিপিপি সংশোধন করা জরুরি। তবে বাড়তি ব্যয় ৪০ কোটি টাকার মধ্যে থাকায় এবং ব্যয়ের অঙ্গভিত্তিক পরিবর্তন না হওয়ায় মন্ত্রী নিজেই তা অনুমোদন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিপিইসি বৈঠকে উপস্থিত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পটিতে নতুন সংযোজিত অংশগুলো বাস্তবায়ন কতটুকু জরুরি তা এরই মধ্যে খতিয়ে দেখা হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন না করলেই নয়, সেগুলো বিবেচনায় রেখে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ব্যয়ের আরও কিছু প্রস্তাব করা হয়েছিল, যেগুলো কমিটি যাচাই-বাছাইপূর্বক বাতিল করেছে।
উল্লেখ্য, নভেম্বর পর্যন্ত চলমান প্রকল্পটির ৯২ দশমিক ৬৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।