উদ্যোক্তাদের সংকট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ নিন

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার হার ‘উদ্বেগজনক’ বলে দাবি করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি। ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে শনিবার অনুষ্ঠিত বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা শীর্ষক সেমিনারে তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ কমে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪’-এ উঠে এসেছে, ব্যবসা পরিচালনায় আটটি মূল সমস্যা রয়েছে। এগুলো হলো মূলধনের অভাব, সহজে ঋণপ্রাপ্তির জটিলতা, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, পণ্য বিপণনের সমস্যা, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকট। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, এমন প্রতিষ্ঠান বা পরিবার পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের মতামতের ভিত্তিতে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মতে, পুঁজির অভাবে অনেকে ব্যবসার পরিসর বাড়াতে পারেন না। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ে না। মূলধনের অভাবকে উদ্যোক্তারা বড় সমস্যা হিসেবে মনে করেন।

আমরা মনে করি, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়। কেন ব্যবসায়ীরা মূলধন সংকটে ভুগছেন, কেন ব্যাংক পর্যাপ্ত ঋণ দিচ্ছে না কিংবা কেন খেলাপি ঋণ আদায় করা যাচ্ছেন না, সব খতিয়ে দেখে সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ ভালো করতে সব মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করতে পারে। ওই টাস্কফোর্সে সব বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের রাখলে তারা কী সমস্যার মুখোমুখি হন, সে বিষয় উঠে আসবে।

ব্যবসা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা ব্যবসায়ীরা প্রতিকূলতার শিকার হন। নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসপ্রাপ্তি, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, কর পরিশোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সময় আগের চেয়ে কম লাগলেও তা প্রত্যাশিত মানে আসেনি। ব্যবসার বাণিজ্যিক বিরোধ মেটাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উদ্যোক্তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। তারা সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারেন না, জাহাজীকরণ করতে পারেন না। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। ঋণ পাওয়ার সূচকে অগ্রগতি হলেও ব্যবসা সহজীকরণে আগে পরিকল্পিতভাবে কাজ হয়নি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূচকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যাগুলো শনাক্ত করা হলেও তা ব্যবসায়ীদের সমাধান করতে হয়। নীতিনির্ধারকরা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে থাকেন। বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান করলেই প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে বিদেশিদের আগ্রহী করা যাবে। অন্যথায় অন্য দেশে চলে যাবেন তারা। সব দেশই এখন বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীরাও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, দুর্নীতি, অনৈতিক লেনদেন, পরিবহন খরচসহ যেসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।