Print Date & Time : 14 August 2025 Thursday 3:06 am

উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক প্রদান অনুষ্ঠান, ২০২২’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। নারী জাগরণের মধ্য দিয়েই ১৯৪১ সাল নাগাদ সেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য ডেল্টা প্ল্যানও করে দিয়ে গেলাম, যাকে ভিত্তি করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে। খবর: বিডিনিউজ।

নারীদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে উৎসাহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে, ফ্রিল্যান্সারদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যেখানে উদ্যোক্তা একজন নারী ও একজন পুরুষ। সেখানে সব থেকে বেশি লাভবান হচ্ছে দেশের নারীসমাজ। এর মাধ্যমে স্বল্পশিক্ষিত একজন নারীও ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

তিনি বলেন, কাজেই সারাদিন ওই ফেসবুক আর এসব না দেখে তারা যদি এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটা নেয়, ফ্রিল্যান্সিংটা করে, তাহলে কিন্তু সেখানে বসে কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারে। একটি প্রত্যন্ত ইউনিয়নে বসে কিছু শিক্ষা নিয়ে সে দেশে-বিদেশে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছে, যেটা অনেক ছেলে-মেয়ে করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কম্পিউটার প্রযুক্তি শিক্ষা একেবারে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক করে দিয়েছে, গ্রামে গ্রামে সুবিধার জন্য ‘তথ্য আপা’ সার্ভিস চালু করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন প্রায় পূরণ করেছে। কারণ দেশের সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদ উপনেতা এই চারজনই মহিলা ছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আপনারা জানেন, আমাদের সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে এই শূন্যস্থান পূরণ আমরা একজন নারীকে দিয়েই করব।

তিনি বলেন, আমাদের সবাই যোগ্য (নারী বা পুরুষ), কাউকে আমি অযোগ্য বলছি না। কিন্তু আমাদের এই সমাজটাকে তো উৎসাহিত করতে হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য, সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।

বেগম রোকেয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমাদের নারীদের শিক্ষা, নারীদের জাগরণ, নারীদের যতটুকু অর্জনÑএর পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্মদিন। তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আমরা আজকে যে যেখানে আছি, কেউ থাকতে পারতাম না।

তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নারীরা সব দায়িত্ব নেবে। তিনি যে আকাক্সক্ষা করে গেছেন, আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা অর্জনের পথে।

নারী অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান, নৌ, সেনাবাহিনী এবং আগে বর্ডার গার্ডে কোনো মেয়ে ছিল না। সব জায়গায় মেয়েদের দিয়েছি। জাতির পিতা পুলিশে কিছু মেয়ে নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি দেখলাম কোনো ডিসি-এসপি পদে মেয়েদের স্থান নেই। বলা হতো, মেয়েরা পারবে না। সচিব নেই। মেয়েদের স্থান অনেক নিচে। সিনিয়রিটির (জ্যেষ্ঠতা) ক্ষেত্রে একসঙ্গে তালিকা করা হতো। আমি বলেছি, মেয়েদের আলাদা লিস্ট চাই। সব জায়গায় ফাইট করে আনতে হয়েছে। তারপরও তারা সচিব পর্যায়ে উঠতে পারে না।

তিনি বলেন, প্রশাসনে একটি ব্যবস্থা আছে, রাষ্ট্রপতির কোটায় ১০ শতাংশ অফিসার নিয়োগ দেয়া যায়। আমি সেই কোটা ধরে প্রথম মেয়ে নিয়োগ দিলাম। আমার অফিসে সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রথম নিয়োগ দিলাম। এভাবে দরজা খুলে দিয়েছি। প্রথম এসপি যখন করতে গেছি, প্রচণ্ড বাধা। মেয়েরা এসপি হবে! আমি বলেছি, হ্যাঁ, মেয়েরাই এসপি হবে।

তৃতীয় লিঙ্গ প্রসঙ্গে বলেন, এরা তো কোনো অপরাধ করেনি। এরা তো বাবা-মায়েরই সন্তান। বাবা-মাকে ফেলে দিয়ে তাদের রাস্তায় চলে যেতে হবে কেন? তাদের জীবন-জীবিকার কোনো কিছু থাকবে না, এটা তো হতে পারে না। শুধু ‘নারী অধিকার, নারী অধিকার’ বলে অনেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, কখনও এই শ্রেণির কথা কেউ চিন্তা করেননি। আমরা সংবিধানে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি। তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবে, লেখাপড়া শিখবে, চাকরি পাবে, কাজ-প্রশিক্ষণ পাবে, একটা সুস্থ জীবন তারা পাবে। প্রতিটি ফরমে নারী-পুরুষের সঙ্গে থার্ড জেন্ডার আমরা লাগিয়ে দিয়েছি।

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট পাঁচ নারী ‘বেগম রোকেয়া পদক, ২০২২’ পেয়েছেন।  পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।