উন্নয়নের মাইলফলক স্বপ্নের পদ্মা সেতু

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে পদ্মা শুধু একটা সেতু নয়, এটি তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। এত দিন ধরে বিচ্ছিন্ন থাকা দক্ষিণ বাংলার মানুষের অন্তরে বইছে আনন্দের ঢেউ। অর্থনৈতিক, সামাজিক, যোগাযোগ ও রাজনৈতিক নানা বিবেচনায় পদ্মা সেতু নির্মাণকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করে অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, আইডিবি এ সেতুর অর্থায়নের অংশীদার হলেও পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক যুক্ত হয়।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। সে মোতাবেক ফিজিবিলিটি স্টাডি ও প্রকল্প তৈরি করা হয়। কিন্তু দেশের মধ্যে একদল কুচক্রী মহল এ সেতুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তার সঙ্গে যোগ দেয় বিশ্বব্যাংক। তারা প্রচার করতে থাকে সেতু নির্মাণে শুরু থেকেই দুর্নীতি হয়েছে। তারা এটাও প্রমাণ করতে চেয়েছিল, সেতু নির্মাণে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী, সচিব, পিডি ও অন্য সংশ্লিষ্টরা দুর্নীতি করেছেন। কিন্তু তাদের এই চক্রান্ত বেশি দিন টেকেনি। কানাডার আদালতসহ বিভিন্ন আদালতে এ কথা প্রমাণ হয়, পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি।

সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে ছাই দিয়ে শেষ পর্যন্ত বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ শে জুন। পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। এটা এখন বাংলদেশের জাতীয় সম্পদ। এ সেতু আমাদের অহংকার। ষড়যন্ত্র পদদলিত করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রতীক। ইতোমধ্যে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং নিজ দেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ‘অসীম সাহসী’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে বাংলাদেশের জিডিপির হার প্রায় ১.২ দশমিক বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন আসবে। পদ্মার এপারে ২১ জেলার অর্থনীতি, সামাজিক, যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেল দুই পথেই দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ অল্প সময়েই ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। দিনের পর দিন পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ফেরিতে আটকে থাকবে হবে না। শত শত অ্যাম্বুলেন্সকে আর অপেক্ষায় থাকতে হবে না। ঝড়বৃষ্টি, শীতের কুয়াশা মানুষের চলার পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না। দক্ষিণ বঙ্গের প্রতিটি অঞ্চলে গড়ে উঠবে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে সেতু এলাকার জমির দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। পদ্মা  নির্মিত হওয়ায় অনেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এ অঞ্চলের কৃষক, মৎস্যজীবী, তাঁতি, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভোক্তার সমাবেশ রাজধানীর সঙ্গে অনায়াসে যোগাযোগ করতে পারবে। অনায়াসে ঢাকা থেকে সহজে অল্প মূল্যে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারবে, এর ফলে তাদের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। গোপালগঞ্জ, বরিশাল, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এখন আর নিজ এলাকায় কাজের অভাবে ঢাকায় যেতে হবে না। প্রতিটি গ্রাম ক্রমেই শহরে পরিণত হবে। পদ্মা সেতুর কারণে এ অঞ্চলের পর্যটনশিল্পের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সুন্দর্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ, মোংলা সমুদ্রবন্দর, কুয়াকাটা,  টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি পরিদর্শনে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে। পদ্মা সেতুর কারণে মোংলা সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব হবে ঢাকা থেকে মাত্র ১৭০ কিলোমিটার, যা চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে অনেকটা কম। এ কারণে মোংলা সমুদ্রবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির হার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। পদ্মার চরাঞ্চলে অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, হাই-টেক পার্ক, আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনীতি আর সমৃদ্ধ হবে।

শফিকুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগ

বশেরমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ