Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 10:02 pm

উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়ম পরিপালন বাঞ্ছনীয়

‘পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণ: নিয়ম ভেঙে ৩৪৮ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয়!’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জাতীয় মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কয়েক দফায় ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। সর্বশেষ নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৩৪৮ কোটি টাকার ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে। এত বড় অঙ্কের ব্যয় অনুমোদনের জন্য সাধারণত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন লাগে। কিন্তু এক্ষেত্রে শুধু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। একনেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়নি। যদিও মন্ত্রণালয় মাত্র ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তি ব্যয় অনুমোদন করতে পারে। এভাবে ব্যয় বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা বাড়িয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির সক্ষমতারও পরিচায়ক। তাই বলে প্রকল্পটিতে যথেচ্ছ অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি অনুমোদন করার কোনো সুযোগ নেই। এভাবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যদি ব্যয় অনুমোদন করা হয়, তাহলে বিষয়টি খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে বৈকি। বিষয়টিকে নিদর্শন হিসেবে দেখিয়ে অন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও এ প্রক্রিয়ায় ব্যয় বাড়িয়ে নিতে পারেন। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বৈকি।

এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারের আর্থিক ব্যয় ব্যবস্থাপনায় অবধারিতভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রকল্পে যদি এভাবে নিয়ম লঙ্ঘনের উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে। কারণ জনগণের করের অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে জনগণের কর দেয়ার মানসিকতা। সাধারণ নাগরিকরা যদি দেখেন যে, তাদের থেকে আদায় করা করের অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হচ্ছে না, তাহলে তারা কর পরিশোধে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। কাজেই জনগণের থেকে আদায় করের অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছেÑতা তাদের জানানো আবশ্যক।

বাংলাদেশ উন্নয়ন দেশে উন্নীত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। এছাড়া ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ারও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে বিভিন্ন খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া এলডিসি থেকে উত্তোরণের পর যদি বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে চায়, তাহলে নানা সূচকে উন্নতি করতে হবে। সে জন্য এখন থেকেই সরকারি বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনা করবে বলে বিশ্বাস।