এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত জরিপে অংশ নেয়া সাড়ে ৪৬ শতাংশই বলেছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবই উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধক। এছাড়া প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় প্রাধান্যকে দায়ী করেছেন ৩২ দশমিক ছয় শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করেছেন ২৮ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ। দেশব্যাপী যুবসমাজের ওপর পরিচালিত জরিপের ফল তুুলে ধরে শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করেন, দেশে উন্নয়নে প্রধান বাধা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি।
উন্নয়নের সুফল সর্বজনীন করতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বড় বাধা, এটি বুঝতে পারছেন দেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাময় জনশক্তি যুবরাÑএটি নিশ্চয়ই আশাব্যঞ্জক খবর। সরকার তথা নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে তরুণ জনগোষ্ঠীর আশা-আকাক্সক্ষার যাতে প্রতিফলন হয়, এমন ব্যবস্থা নেয়া। এটি স্বীকার করতে হবে, তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যে গুরুত্বপূর্ণ, এটি তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশকে এগিয়ে নিতে তারা তৈরি হচ্ছেন; এর মাধ্যমে সেই বার্তাও নিতে পেরেছেন বলে আমরা মনে করি। এখন যে গণতন্ত্র গৌণ হয়ে গেছে, সেটিও আড়ালে থাকেনি, উঠে এসেছে তাদের পর্যবেক্ষণে। প্রত্যক্ষ ভোট সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে তাদের কাছে।
৫৩ দশমিক চার শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, যুবসমাজ আগামী দিনে দেশের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। ৪৬ শতাংশ মনে করেন, যদি নীতিপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে, তাহলে তরুণরা প্রস্তুত।
দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। পাশাপাশি এটিও মেনে নিতে হবে, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির সুফল দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের বেশিরভাগ মানুষ ভোগ করলেই এগুলো অর্থবহ হবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে ভূমিকা না রাখলে ধরে নিতে হবে গৃহীত পরিকল্পনা যথেষ্ট নয়। ধনী ও অতিধনীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই, যদি বেশিরভাগ মানুষ উন্নয়নের বাইরে থাকে। প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে হবে তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্তিক মানুষকেও।
যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি না হলে সবাই প্রবৃদ্ধির সুফল পাবে না। ফলে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা কিংবা এসডিজি অর্জন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। উন্নয়নকে টেকসই করতে অবশ্যই অর্থনীতিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে এবং শূন্য সহনশীলতায় দুনীতি ও স্বজনপ্রীতি রুখতে হবে। স্বজনপ্রীতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প থাকলেও দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী এখনও বৈষম্যের শিকার। কেন সুবিধাভোগী নির্বাচনে স্বচ্ছতা নেই! একইভাবে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এক কোটি টাকার প্রকল্পের যদি নানা অজুহাতে ব্যয় ১০ কোটি ছাড়িয়ে যায়, সেটিও কাম্য নয়। দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া গেলে উন্নয়নের সুফল সর্বজনীন হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।