ইশতিয়াক হাসান: বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে জঙ্গি উত্থান। এ সমস্যা একেবারে নতুন নয়। তবে অন্য সময়ের চেয়ে এটি এখন বৃহৎ আকারে দেখা দিয়েছে। সরকার শুরুতে এ বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়নি বলে অনেকের অভিযোগ। এখন সরকার জঙ্গি দমনে আন্তরিক। সম্প্রতি জঙ্গিদের বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ। এর আগে জঙ্গি হামলায় অনেকে মারা গেছেন; কিন্তু কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মারা যাননি। এটা দেশের জন্য বড় ভাবনার বিষয়।
সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে অন্যতম সিলেটের শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানায় অভিযান। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই কর্মকর্তাসহ সাত জন মারা যান, যা বড় ধরনের ক্ষতি। র্যাবের এ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় দেশের বড় ক্ষতি হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই বলছেন। তার জানাজা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা একজন চৌকস কর্মকর্তাকে হারিয়েছি। দেশ ও র্যাব বাহিনীর জন্য বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের অচিরেই আমরা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব।
এ ঘটনাই শেষ নয়, সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ না হতেই মৌলভীবাজার শহরে দুটি এবং কুমিল্লার একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। সম্প্রতি যেন জঙ্গি আস্তানার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মৌলভীবাজারে জঙ্গিবিরোধী অভিযান অপারেশন ম্যাক্সিমাস-এ তিনজন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টালে। একের পর এক হামলায় দেশের মানুষ শঙ্কায় রয়েছে বলে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা শান্তিতে বসবাস করতে চায়। দেশও সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে। কিন্তু জঙ্গি হামলার মতো কারণে দেশের উন্নতির পথ রুদ্ধ হোক, এটা কাম্য নয়।
কেন এ ধরনের জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান বেশি হচ্ছে? কারা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে? এ ধরনের নানা প্রশ্ন অনেকের মতো আমার মনেও জাগে। দৃশ্যত এ জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেশের একশ্রেণির তরুণ। তারা এ পথে পা বাড়াচ্ছে, এটা বড় শঙ্কার বিষয়। তাদের এ ধরনের ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এরা আত্মঘাতী। এ জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস সম্পৃক্ত বলে অনেকে দাবি করেন। আইএসের সদস্য না থাকলেও জঙ্গি হামলা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কোনো কোনো হামলা আইএসের মতো বলেই অনেকে দাবি করেন। তবে আইএস না থাকলেও দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
এ জঙ্গি উত্থান রোধে সরকারকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের উন্নয়নের অন্তরায়গুলোর মধ্যে জঙ্গি উত্থান অন্যতম প্রধান বলেই মনে হয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়াতে এ জঙ্গিগোষ্ঠীকে প্রতিহত করাটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের যেন ক্ষতি না হয়, সেদিকে সরকার নজর দেবে আশা রাখি। বিশ্বের যেসব দেশে জঙ্গির বিস্তার হয়েছে, সেসব দেশের অবস্থান এখন ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায়। আমাদের এ শান্তিপ্রিয় দেশ নিয়ে সে শঙ্কায় পড়তে চাই না। এ জন্য সরকার জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা থাকলো।
বাড্ডা, ঢাকা