ঘূর্ণিঝড় রেমাল

উপকূলের চার জেলায় প্রস্তুত ২১৪২টি আশ্রয় কেন্দ্র

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল’ মোকাবিলায় উপকূলীয় চার জেলায় প্রস্তুত দুই হাজার ১৪২টি আশ্রয় কেন্দ্র। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝরের আঘাত ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এই প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঝালকাঠিতে ৮৮৫টি, খুলনায় ৬০৪টি, সাতক্ষীরায় ১৮৭টি ও নোয়াখালীতে ৪৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

ঝালকাঠি: ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় ঝালকাঠিতে প্রস্তুত ৮৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্র। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এই প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার জেলা প্রাশাসনের উদ্যোগে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক ফারহা গুল নিঝুম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য জেলায় ৮২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৩৭টি মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের আটটি উদ্ধারকারী দল। এছাড়া নগদ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং জরুরি মুহূর্তে বিতরণের জন্য ৪০০ মেট্রিক টন চাল মজুত আছে। পাশাপাশি শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ৪২৪ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছে। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ছয়টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল, সিভিল সার্জন ডাক্তার জহিরুল ইসলাম, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় সাতক্ষীরায় প্রস্তুত রয়েছে ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে চার লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণকাজে ব্যবহারের জন্য পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুত রয়েছে। এছাড়া প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানি। প্রস্তুত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্টেশন ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই সময়ে এ মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। তার পরেও এ উপলক্ষ্যে আমাদের উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনিসহ কালীগঞ্জ দেবহাটা এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা; শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা; জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা যেন নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করেন; একই সঙ্গে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা; পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুত রাখা এবং দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

খুলনা: ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় খুলনায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। এছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লা ও পাঁচ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তত রয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে তিন লাখ ১৫ হাজার মানুষ থাকতে পারবে।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ মানুষ ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৮০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নোয়াখালী: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল’ মোকাবিলায় নোয়াখালীর উপকূলীয় পাঁচ উপজেলায় ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ১০২ মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

সভায় জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে উপকূলীয় পাঁচ উপজেলায় ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১০২ মেডিকেল টিম ও আট হাজার ৩৬০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সজাগ থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এই (০১৭২৪০৯৬২৬৯) নম্বরে ফোন করে ঘূর্ণিঝড়-সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে।