উপকূলে নদ-নদীতে নিষিদ্ধ জালে অবাধে মাছ শিকার

ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটার বলেশ্বর, বিষখালী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও তার তীরবর্তী চরগুলোতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে কিছু অসাধু জেলে। এতে প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ সামুদ্রিক মাছের রেণু। ফলে দিন দিন নদী ও সাগরে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। শিগগিরই ব্যবস্থা না নেয়া হলে হারিয়ে যাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা চরের বিরাট অংশজুড়ে খুঁটি পুঁতে গড়া জাল বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া হরিণঘাটা-লালদিয়া বনের কোল ঘেঁষে চরাঞ্চল, বলেশ্বর তীরবর্তী পদ্মা, রুহিতা, ছোট টেংরা ও চরদুয়ানী এলাকায় জেলেরা ছোট ফাঁসের নিষিদ্ধ বেহুন্দী জাল, গড়া জাল, বাঁধা জাল, ঘোপ জাল দিয়ে ছোট মাছ ধরছেন। এসব জালের ফাঁস আধা ইঞ্চি থেকে পৌনে এক ইঞ্চি। কয়েকশ মিটার দৈর্ঘ্যরে একেকটি ঘোপ জাল জোয়ারের সময় পাতা হয়, ভাটার সময় পানি নেমে গেলে ঘোপ জালে আটকা পড়ে ছোট-বড় মাছের পাশাপাশি অসংখ্য রেণু। ঘোপ বা চরগড়া তৈরিতে শতাধিক গেওয়া ও কেওড়া গাছের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। এসব গাছ সিংহভাগই প্রাকৃতিক বন হরিণঘাটা, লালদিয়া ও চরলাঠিমারা সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কেটে আনা হয়। কম বয়সী লাঠি আকৃতির গাছ খুঁটি হিসেবে ব্যবহƒত হয়। নতুন জš§ নেয়া গাছ কাটার ফলে সংরক্ষিত বনও উজাড়ের হুমকিতে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এক শ্রেণির দাদন ব্যবসায়ী জেলেদের বলেশ্বর, বিষখালী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও তার তীরবর্তী চরগুলোতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে জানান, তারা বন বিভাগের সঙ্গে রফাদফা করেই জাল পাতেন। গোপের খুঁটি হরিণঘাটা, লালদিয়াসহ চরের বিভিন্ন জঙ্গল থেকে কেটে নেন। তারা আরও জানান, আমরা ভাটির সময় চরে জাল পাতি, এতে পোয়া, টেংরা, গুলিশা, চাবলি (ইলিশের পোনা)সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। জালে এসব মাছের পাশাপাশি অনেক মাছের পোনাও ধরা পড়ে। কিন্তু এসব পোনা কোনো কাজে লাগে না বলে তারা ফেলে দেন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, কিছু অসাধু জেলে বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও তার আশপাশে গোপ জালসহ নিষিদ্ধ জাল দিয়ে দখল করে রেখেছে। এ অবৈধ জাল নিয়ে আমরা একাধিকবার মানববন্ধন করেছি। বিক্ষোভ মিছিল করেছি, প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। তারপরেও সমাধান হয়নি। শুধু আশ্বাস পেয়েছি নিষিদ্ধ জাল অপসারণের, তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নিয়মিত যেভাবে ছোট মাছ ও মাছের পোনা শিকার করা হচ্ছে তাতে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়বে।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকারের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান করে থাকি। কিছু দিন আগেও অভিযান করে অনেক জাল উদ্ধার করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। জেলেরা জাল পেতে চলে যায়, যে কারণে অভিযানের সময় তাদের আটক করা যায় না। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।