উম্মুক্ত হচ্ছে ভুটান সীমান্ত কর বাড়ছে তিনগুণ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দিচ্ছে ভুটান। ২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে বন্ধ করে দেয়া হয় ভুটানের সব প্রবেশপথ। এরপর কেটে গেছে আড়াই বছর। দেশটির কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছিল, ১ জুলাই দরজা খুলবে ভুটানের, কিন্তু তা হয়নি। গত সপ্তাহে ভুটান সরকার এক ঘোষণায় জানায়, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে দেশের দরজা। খবর: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

জানা গেছে, ২০ জুনের আগে যেসব পর্যটক ভুটানে বেড়াতে যাওয়া নিশ্চিত করেছেন, তাদের দিনপ্রতি ৪৫০ ডলার টাকা ডেভেলপমেন্ট ফি দিতে হবে। এই ডেভেলপমেন্ট ফি শুধু সরকারি রয়্যালটি চার্জ। তবে পর্যটকদের জন্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি’র ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ফি মাথাপিছু প্রতি রাতে ৬৫ ডলার থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে

মিনিমাম ডেইলি প্যাকেজ রেট নেয়া হবে না। এসডিএফ সরাসরি সরকারের কাছে জমা দিতে হবে পর্যটকদের। এজন্য আলাদা করে ট্যুর অপারেটরদের কিছু দিতে হবে না।ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও টুরিজম কাউন্সিলের

ড. তান্ডি দর্জি এক বিবৃতিতে জানান, পর্যটনকেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে রাজধানী থিম্পুতে পর্যটকরা নিজেদের মতো নির্বিঘেœ ঘুরতে পারবেন। তবে ফাজোডিং ট্রেক বা ভুটানের অন্য কোথাও যেতে চাইলে একজন গাইড সঙ্গে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পর্যটক চাইলে প্রতিদিন গাইড পরিবর্তন করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভুটানের দরজা বন্ধ রয়েছে। তাই আমরাও চাইছি, ভুটান খুলে যাক, যাতে মানুষের বিশেষ করে বিদেশিদের স্বাভাবিক যাতায়াত ঘটে এবং পর্যটকরা ঘুরে যেতে পারেন। তাছাড়া আমাদের লক্ষ্য, দর্শনার্থীদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করা ও আমাদের নাগরিকদের জন্য পেশাগত কাজের ব্যবস্থা করা।

প্রসঙ্গত, ভারতের উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ির পর জয়গাঁকে দ্বিতীয় বাণিজ্যিক শহর বলা হয়। করোনার কারণে ভুটান গেট বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সীমান্তলাগোয়া জয়গাঁর অর্থনীতি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মূলত ভুটানের ক্রেতাদের ওপর জয়গাঁর খুচরা বাজার নির্ভরশীল। কিন্তু কভিডের কারণে দীর্ঘদিন ভুটান গেট বন্ধ থাকায় এলাকায় খুচরা বাজারে প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ দোকান। জীবিকার তাগিদে অনেক ব্যবসায়ী চলে গেছেন অন্য রাজ্যে। স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া বইছে ভারত-ভুটান সীমান্তে অবস্থিত আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁয়।

হিমালয়ের পাদদেশের দেশটি বিশ্বের পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশটি লাস্ট সাংগ্রিলা নামে পরিচিত। তবে কঠোর কভিডবিধির কারণে সে দেশে প্রবেশ করতে পারেননি আগ্রহী পর্যটকরা। জীবনযাত্রার উচ্চমান বজায় রাখেন এখানকার নাগরিকরা। পর্যটকদের প্রতি তারা বেশ আন্তরিক।

ড. দর্জি বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নতুন রূপে পর্যটকদের সামনে হাজির হচ্ছি। মহামারি আমাদের শিখিয়েছে এই খাত নিয়ে নতুন করে ভাবতে এবং কীভাবে এর উন্নয়ন করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি আমরা। এতে আমরা শুধু অর্থনৈতিকভাবে

নয়, কার্বন নিঃসরণও কমাতে পারব বলে আশা করছি। এজন্য প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯১ সাল থেকে পর্যটকদের ৬৫ রুপি ডেভেলপমেন্ট ফি দিতে হচ্ছে, যা বেড়ে প্রায় ২০০ ডলার করা হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে পর্যটন খাতে নিয়োজিত স্থানীয় কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো হবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে খরচ করা হবে।

ভুটানের অর্থনীতির উন্নয়নে বিশাল অবদান রয়েছে পর্যটনের। দেশটির জিডিপির ছয় শতাংশের বেশি আসে এ খাত থেকে।

ভুটানের টুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, মহামারির আগে ২০১৯ সালে ভুটানে তিন লাখ ১৫ হাজার ৫৯৯ পর্যটক বেড়াতে আসেন এবং দেশটি পর্যটন খাত থেকে আয় করে সাড়ে ২২ কোটি ডলার।