দেশের অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকাণ্ডও বাড়ছে। বিকল্প তেমন কোনো মাধ্যম না থাকায় ব্যাংক ব্যবহারে সবার আগ্রহ বেশি। তবে এ খাত ভালো খবর দিতে পারছে না দীর্ঘদিন। সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ধুঁকছে ব্যাংকগুলো। বিশেষত খেলাপি ঋণ বেশি সমস্যা তৈরি করছে। প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক মহলের হস্তক্ষেপ এ জন্য বেশি দায়ী। অবশ্য কিছু কর্মকর্তার অদক্ষতাও ক্রমেই ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, ঋণ অবলোপন, কিংবা পুনঃতফসিলের মতো ব্যাপারগুলো বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ব্যাংক খাত রক্ষায় এসব কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।
ঋণখেলাপি কমিয়ে নিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে এগুলো কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে নীতিমালা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধার নীতিমালা জারি’ শিরোনামে একটি খবর গতকালের দৈনিক শেয়ার বিজে ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ঋণখেলাপিদের দুই শতাংশ এককালীন নগদ জমাসাপেক্ষে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছর মেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট বা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধের বিশেষ সুবিধার নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে এ ধরনের উদ্যোগ, সন্দেহ নেই; তবে অতীতে এ ধরনের নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা অপব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। ফলে উদ্যোগগুলো তেমন কাজে আসেনি। এজন্য এ ধরনের উদ্যোগের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ভালো ব্যবসায়ী ও ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে যারা ঋণ খেলাপ করেছে, তাদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ইদানীং অসৎ ও প্রভাবশালীদের ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগ কিন্তু বাড়ছে।
এ ধরনের সুবিধা প্রদানের পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ব্যবসায়ী বা শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকঋণ অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে না। শ্রেণিকৃত ঋণ নিয়মিতভাবে আদায়ের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, বড় আকারের ঋণগুলো প্রায় ক্ষেত্রেই খেলাপি হলেও এ ধরনের ঋণ দেওয়ায় ব্যাংকের আগ্রহ বেশি। অথচ ছোট ঋণ পরিশোধের হার সন্তোষজনক হলেও এতে তেমন আগ্রহ দেখায় না ব্যাংক, যা কাম্য নয়। ছোট-বড় সব ধরনের ভালো ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ দিতে হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বন্ধে তারা আরও আন্তরিক হবে বলে আমরা আশা করি।

Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 9:41 am
ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধার অপব্যবহার যেন না হয়
সম্পাদকীয় ♦ প্রকাশ: