নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে যেসব হিসাবে ঋণাত্মক মূলধন রয়েছে, সেসব হিসাবে শেয়ার কেনাবেচা করার সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়শনের (ডিবিএ) অনুরোধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত রোববার বিএসইসিতে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিনিয়োগকারীদের নেগেটিভ ইক্যুইটির হিসাবে শেয়ার কেনাবেচার সুযোগ দিতে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর ৩ (৫) ধারার কার্যকারিতা আরও এক বছরের জন্য স্থগিত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য কমিশন বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
২০১০ সালের পর থেকে টানা দরপতনে অসংখ্য মার্জিন অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগকারীর মূলধন ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। ওই সব অ্যাকাউন্টে থাকা শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম এমন জায়গায় নেমে এসেছে যে, বিনিয়োগকারীর নিজস্ব মূলধন বলতে কিছু নেই। উল্টো গ্রাহকের কাছে টাকা পাবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। আইন অনুসারে এমন অ্যাকাউন্টে লেনদেন নিষিদ্ধ।
বাজারে টানা দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ নিয়ে টাকা খাটিয়ে লোকসানে পড়া বিনিয়োগকারীদের দাবি ও স্টক এক্সচেঞ্জের অনুরোধে ২০১৩ সালের এপ্রিলে মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারাটির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। এরপর দুবার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবারই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আইন শিথিলের ওই নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু গত বছর এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো অনুরোধ না জানানোয় বিএসইসি এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। ফলে স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায়।
১৯৯৯ সালের মার্জিন রুলসের ৩(৫) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো বিনিয়োগকারীর ডেবিট ব্যালান্স ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান তার কাছে নতুন করে মার্জিন চাইবে। এ মার্জিনের পরিমাণ এমন হবে যাতে তার ডেবিট ব্যালান্স ১৫০ শতাংশের ওপরে থাকে। নোটিস দেওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে পর্যাপ্ত মার্জিন জমা দেওয়া না হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে নতুন কোনো লেনদেনের অনুমতি দিতে পারবে না ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান।
বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিষয়টি কমিশন বিবেচনা করতে পারে। এটির বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানে আছে কমিশন।
উল্লেখ্য, মার্জিন ঋণ হচ্ছে বিশেষ ধরনের ঋণ সুবিধা। শেয়ার কেনার জন্য ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রাহককে এ ঋণ দিয়ে থাকে। বিএসইসি প্রণীত মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর আওতায় এ ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এদিকে ডিএসইর এ প্রস্তাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, ‘আমাদের যদি মাইনাস ইক্যুইটি থাকার পর লেনদেন করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে কিছু নতুন বিনিয়োগের সুযোগ হবে। আমরা ফ্রেশ ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহী হবো।’
এ বিষয়ে আরিফুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, সময় না বাড়লে ‘অ্যাকাউন্টে মাইনাস থাকার কারণে আমরা নতুন ফান্ড আনতে পারব না। কারণ টাকা জমা দেওয়া মাত্র তা মাইনাস ইক্যুইটিতে যোগ হয়। ফলে ইচ্ছে থাকলেও আমরা নতুন বিনিয়োগ করতে পারি না। ফলে মাইনাস ইক্যুইটি থাকা হিসাবে লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি হলে আমরা উপকৃত হবো।’
