মহামারি কভিডকালে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়বে, এটি একপ্রকার স্বাভাবিক। বিশ্বের সব দেশেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য; কমেছে লেনদেন। সার্বিকভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় বেড়েছে, কমেছে আয়। বেড়েছে খেলাপি ঋণও। ঋণ আদায়ে দেয়া হয়েছে বড় ছাড়। সব মিলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা কমে গেছে। যেখানে ঋণ, সেখানে ঝুঁকি থাকবেই। ঝুঁকি যাতে গ্রাহককে বিপর্যস্ত করতে না পেরে, সে জন্যই প্রভিশন।
প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর হয়, গ্রাহকের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অপরিকল্পিত আমানত গ্রহণ এবং ঋণের নামে তা বের করে নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই যে অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা, তার জন্য কেবলই কভিড নয়, আমাদের দায়িত্বহীনতাও দায়ী। কেননা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কোনো কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমস্যাগ্রস্ত হলে আমানতকারীদের প্রাপ্য পরিশোধে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা থেকে এ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে। তবে শতভাগ সঞ্চিতির প্রয়োজন হয় না, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধাপে ধাপে এটি সংরক্ষণ করতে হয়। সেটিও যথানিয়মে সংরক্ষণ করা হয় না। ফলে নিরাপত্তা থাকে না আমানাত ও ঋণের। গতকাল শেয়ার বিজে ‘নিরাপত্তা নেই বিআইএফসির ৭৬ শতাংশ ঋণের’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থতার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। এতে বলা হয়, প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৬২১ কোটি টাকা এবং মোট ঋণের ৯৪.৮৬ শতাংশই খেলাপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যানের কারণে ডুবতে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) ৭০০ কোটি তিন লাখ টাকার নিরাপত্তা সঞ্চিতির প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে আছে মাত্র ৭৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নামে-বেনামে কোম্পানি থেকে বের করে নিয়েছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। ঋণ হিসেবে নিলেও সেটা এখনও পরিশোধ হয়নি। পুরোটাই এখন খেলাপি অবস্থায় পড়ে আছে। কয়েকজন নয়, একজনের কাছ থেকে কেন ঋণ আদায় করা যায়নি, সেটিও বড় প্রশ্ন। পরিচালনা পর্ষদই বা কী করেছে? বলা হয়ে থাকে, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি এবং এমডি-চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ায় অনিয়ম সংঘটিত হয়। তাই সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বিআইএফসির বোর্ড পুনর্গঠিত হয়েছে, এটি ভালো খবর। কিন্তু তদন্তই শেষ হচ্ছে না। তদন্তে যেন কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে, কোনোভাবেই আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। লুটপাট ও ঋণ কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থা দৃশ্যমান হলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতরা প্রশ্রয় পেত না। এখানেও যেন কোনো খেলাপি কোনো আনুকূল্য না পায়। ঋণ পরিশোধে না হয় কভিডের অভিঘাত রয়েছে, কিন্তু নামে-বেনামে ঋণ নেয়ার পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এটি যেকোনো বিবেচনায়ই অনিয়ম। এসব বিবেচনায় সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ঋণ ও আমানত রক্ষায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ বাড়াতে হবে। �9_���